‘রচনাবলি - ১ম খণ্ড’ বইয়ের ভূমিকাপত্র: নবকৈশোরে যখন কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম, লুকিয়ে লুকিয়ে ঢাকার পত্রপত্রিকায় কবিতা পাঠাতাম- কিন্তু ছাপা হতো না, তখন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। একদিন বাংলাভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিকদের মতো আমারও রচনাবলি বেরুবে। একটা সময় ছিল, যখন কীর্তিমান বলে বিবেচিত লেখকদের রচনাবলি বা রচনাসমগ্র প্রকাশিত হতো তাদের মৃত্যুর পর। বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা জীবনানন্দ দাশ জীবদ্দশায় তাঁদের রচনাবলি প্রকাশিত হতে দেখে যেতে পারেননি। আজকাল ঐ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন বইয়ের বাজার প্রসারিত হওয়ার কারণে লেখকদের জীবদ্দশাতেই তাঁদের রচনাবলি প্রকাশিত হয় হচ্ছে। আমি এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে রাজী নই। যথাসময়ে জন্মগ্রহণ করার জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান ও বড় লেখক বলেই মনে করছি। আমার এইরূপ মনে করার দায় শুধু আমার একার নয়। আমার পাঠক ও আমার প্রকাশকরাই আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছেন। এখন আর আমাকে সহজে মাথা থেকে নামানো যাবে বলে মনে হয় না। আমি না ভাবলে কী হবে, আমাদের হয়ে যিনি ভাবেন, তিনি ঠিকই আমার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছিলেন ক্রমশ বড় লেখক হয়ে ওঠার সম্মান ও শাস্তি। আমি জেনেছি, সম্মান ও শাস্তি কখনও একা আসে না। ১৯৬৭-২০১৭, এই পঞ্চাশটি বছর আমি আমার লেখার পেছনে ব্যয় করেছি। কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখেছি। প্রচুরই বলা চলে কবিতার তুলনায়। ঐ সময়ের মধ্যে আমি কবির স্বীকৃতি লাভ করেছি, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি এবং কবিতা ও গদ্য মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছি। শুধু যে রচনা করেছি, তাই নয়। আমার রচনাসমূহ পাঠকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম এবং প্রকাশকদের কাছে বিক্রয়যোগ্য পণ্য হিসাবে গণ্য হয়েছে।
জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫, আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত,তিনি একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধীতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।