অবতরণিকা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে পুরাণ এক অবিস্মরণীয়,সৃষ্টি। আজ থেকে কত হাজার বছর আগে পুরাণ লেখা হয়েছিল। ঐতিহাসিকেরা এখনও তার সঠিক দিনক্ষণ নির্ণয় করতে সক্ষম হননি। পুরাণ কোনো এক বিদগ্ধ ব্যক্তির একক প্রয়াস কিনা তার অনুসন্ধান চলেছে। আমরা জানি, মহামতি ব্যাসদেব পুরাণ লিখে গেছেন। পুরাণের বিভিন্ন খণ্ডের মধ্যে যে বৈদগ্ধের হীরক দ্যূতি আছে, তা আজও আমাদের একাধারে মুগ্ধ এবং অন্য দিকে বিস্মিত করে।' পুরাণ এক মহাসমুদ্রের মতো। পুরাণ সমুদ্রে অবগাহন করলে আমরা মানবমনীষার বিভিন্ন উজ্জ্বল দিক চিহ্নগুলি সম্পর্কে অবহিত হই। পুরাণের মাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন চলার পথকে আরও মসৃণ করে তুলতে পারি। পুরাণ আমাদের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা অসংখ্য প্রশ্নের যথার্থ এবং সঠিক জবাব দিতে পারে। পুরাণকে ১৮টি খণ্ডে বা পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি খণ্ড স্বয়ংসম্পূর্ণ অথচ একটি খণ্ডের সাথে পরবর্তী খণ্ডের যোগসূত্রতা নির্ণীত হয়েছে। পুরাণ মূলত দেবদেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনামূলক গ্রন্থরাজি। তবে এর মধ্যে শুধু ধর্মীয় অনুশাসন লুকিয়ে নেই, এর মধ্যে আ আধ্যাত্মিক আলোচনা, সামাজিক অন্বেষণা এবং সর্বোপরি মানব-মনীষার সাৰ্থক বিকাশ ৷ “অষ্টাদশ পর্বের পুরাণ সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। এই পুরাণ সমগ্রটিকে বাংলা ভাষাভাষী পাঠক-পাঠিকার হাতে তুলে দেবার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে প্রকাশকরা প্রয়াসী হয়েছিলেন। অবশেষে সেই মহৎ সারস্বত ফলশ্রুতি আজ প্রকাশনার আলো দেখতে পেল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পুরাণকে বারবার উপস্থাপিত করা হয়েছে। বিদগ্ধ অনুবাদকমণ্ডলী জীবনব্যাপী সাধনার গ্রন্থরাজি পাঠক সাধারণের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন । আজ আবার নতুন করে নতুন নিরীখে পুরাণকে আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হল । এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে। তা হল, বিশাল পৌরাণিক সাহিত্যকে অনুবাদ করার সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংক্ষেপ করা হয়েছে। তবে তার জন্য মূল পুরাণের রস এতটুকু ক্ষুণ্ণ হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস । অনুবাদক এবং সম্পাদক হিসেবে আমি আশা করব যে, এই পুরাণ সাহিত্য আপনার জ্ঞান পিপাসা মেটাবে। দৈনন্দিন চলার পথে পুরাণকে অবলম্বন করে আপনি সুখী সম্পৃক্ত জীবন যাপনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। বেঁচে থাকাটাই যে জীবনের একমাত্র অর্থ নয়, জীবন আরও গভীর অর্থবাহী—পুরাণ পড়লে আমরা সেই উপলব্ধি করতে পারি ।