"নারী ও পর্দা (কী ও কেন?)" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ‘পর্দা’ মানব জাতির সহজাত একটি চাহিদা। পরিমার্জিত স্বভাব এবং পরিশীলিত মানবতার দাবী হল, প্রতিটি মানুষ তার গােপন ও লজ্জাকর বিষয়সমূহকে পর্দাবৃত রাখবে। মূলত পর্দাহীনতাই হল উলঙ্গপনা ও নিলজ্জতার উৎস। তাই সুসভ্য ও উন্নত স্বভাববৈশিষ্ট্যের অধিকারী কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় পর্দাহীন হওয়া। মানব-মনের এই সুকুমার মনােবৃত্তির কথা বিবেচনা করে ইসলাম পর্দার ন্যায় এমন এক সমুন্নত ব্যবস্থা পেশ করেছে, যা পালন করা ব্যতীত মানবজাতিকে আত্মিক ও নৈতিক এবং পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। পর্দাহীন পরিবেশ মানবতার জন্য মৃত্যুতুল্য, আর সতী-সাধ্বী ও ‘স্বলাজ’ নারীর জন্য এক অন্ধকার জিন্দানখানা। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা ভাল করেই জানেন, মানবজাতির নৈতিক গুণাবলি সংরক্ষণের সর্বাধিক কার্যকরী ব্যবস্থা কী হতে পারে? তাই তিনি পর্দা’র ন্যায় এমন এক বিধান প্রদান করেছেন, যা মানবীয় ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ ও ‘স্বভাবৃত্তির’ সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। মােটকথা, ইসলামী পর্দা ব্যবস্থা এমন এক মােক্ষম উপায়, যার মাধ্যমে মানব সম্পর্কের প্রতিটি স্তরে’ নৈতিক বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকা অতিসহজ।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।