ভূমিকা মানুষ সৃষ্টিশীল প্রাণী। শিল্পের বিন্যাসে তার তৃপ্তি। সময় এবং জড়পদার্থকে কাজে মানুষ নিজের সাধ্যের বাইরে অমর কিছু কলা বা স্থাপত্য সৃষ্টি করে রেখে যায় পরবর্তীদের নজর কারার জন্য। তাই নানাদেশে নান ধরনের বিস্ময়কর ও দর্শনীয় আশ্চর্যরকম জিনিস দেখা যায়। কিছু কিছু দর্শনীয় জিনিস আসে যা প্রাকৃতিক, মানুষের সেখানে খুব একটা হাত নেই কিন্তু কিছু কিছু আশ্চর্য একেবারেই মানুষের হাতে তৈরি যা সত্যি বিস্ময়ের উদ্যোগ করে। কালের স্রোতে সব ধুয়ে গেলেও ইতিহাসবিদদের তত্ত্বাবধানে বা তাদের সংরক্ষনে অনেক আদিম থেকে যায় অমর হয়ে। আদিতে অনেক অনেক দর্শনীয় জিনিস ছিল কিন্তু প্রাকৃতিক বা লোভী মানুষের হাতে তা বিনষ্ট হয়েছে। সেসব জিনিসের কথা এখনকার মানুষ জানতে চায়। কিন্তু বর্তমানে তা জানতে হবে ইতিহাস থেকে। ডেরোডোটাস সর্বপ্রথম গ্রিক-পার্শিয়ান যুদ্ধের একটা বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এভাবেই শুরু হয় ইতিহাস লেখা। তাই তাকেই ইতিহাসের জনক বলা হয়। ক্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ডেরোডোটাসের লেখনীতেই মানুষের হাতে গড়া সে সময়ের উলেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তিগুলোর প্রাচীনতম বিবরণ পাওয়া যায়। এরপর একে একে আরও কয়েকজন গ্রিক লেখক, ঐতিহাসিক আপপাশের অহ্চলের সেরা স্থাপত্য কীর্তিগুলো সম্পর্কে লিখে তা আলেকজান্ড্রিয়া লাইব্রেরিতে সংরক্ষণে রাখেন। তাদের বিবরণে তখন সাতটি আশ্চর্য জিনিস ছিল। সাইরিনের ক্যালিমাচুস (খ্রি.পূ. ৩১৫ – খ্রি.পূ. ২৪০) ‘পৃথিবীর আশ্চর্য কীর্তিগুলোর এক সংগ্রহ’ (A collection Of Wonders Around The World) শিরোনামে এক বিবরণ লেখেন। তবে, সংগ্রহ বলতে শুধু শিরোনামটিই পাওয়া গেছে। কারণ, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি ধ্বংসের সাথে বিবরণীটি ধ্বংস হয়ে যায়। গ্রিক লেখক সিডনের অ্যান্টিপেটারই সম্ভবত প্রথম ব্যক্তি যিনি সাতটি আশ্চর্য কীর্তির একটি তালিকা তৈরি করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২য় অব্দে তিনি সে সময়কার জানা বিশ্বের বিশাল বিশাল স্থাপত্য কীর্তিগুলোর মধ্য থেকে বেছে বেছে সাতটির একটি তালিকা তৈরি করেন। তিনি সাত সংখ্যাটিকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ, প্রাচীন গ্রিসে সাত সংখ্যাটিকে জাদু সংখ্যা হিসাবে বিবেচনা করা হতো। প্রাচীন বিশ্বের সপ্ত আশ্চর্যের তালিকা মধ্যযুগে চূড়ান্ত হয়। মানুষের হাতে গড়া প্রাচীনকালেন সাতটি বিশালতম এবং চিত্তাকর্ষক কীর্তিকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি হয়। মধ্যযুগের অনুমোদিত তালিকার সবচেয়ে পুরাতন উল্লেক দেখা যায় ওলান্দাজ শিল্পী মায়েরটেন ভ্যান হিমসকার্ক (১৪৯৮-১৫৭৫) এর খোদাইকর্মে এবং জোহান ফিশার ভন আর্লস এর ‘হিস্টোরী অব আর্কিটেকচার’ এ। তালিকাভুক্ত স্থাপত্য কীর্তিগুলোর মধ্যে যেগুলো বেশি শক্তিশালী ছিল সেগুলোর কোন কোনটি মধ্যযুগেও মোটামুটি টিকে ছিল। মানুষেরহাতে তৈরি প্রাচীন এই কীর্তিগুলোকে আকার-আকৃতিতে, সৌন্দর্যে-জাঁকজমকে প্রকৃতির বহু সৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। স্থাপতিদের কাছে ইমারতগুলো ছিল ধর্ম, পৌরাণিক কাহিনী, শিল্প, ক্ষমতা আর বিজ্ঞানের সমাহার। আর বর্তমানকালে আমাদের কাছে এগুলো হচ্ছে চারপামের প্রাকৃতিক পটভূমিকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে বিপুলায়াতন এবং অসাধারণ সৌন্দর্যনণ্ডিত হর্ম্যের সৃষ্টিতে মানুষের ক্ষমতার নিদর্শন। সাতটির মধ্যে ছয়টি বিস্ময়কর স্থাপত্য কীর্তির এখণ আর কোন অস্তিত্ব নেই। শুধু একটি মাত্র নিদর্শন কালের করাল গ্রাসকে অগ্রাহ্য করে চিকে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন যুগের সাতটি আশ্চর্য কীর্তি হচ্ছে, (১) গিজার পিরামিড, (২) ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান, (৩) অলিম্পিয়ার জিউ্সের মূর্তি, (৪) আর্টেমিসের মন্দির, (৫) হ্যালিকারনাসাসের সমাধি সৌধ, (৬) রৌডস দ্বীপের অতিকায় মূর্তি, (৭) আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর।