অভিব্যক্তির শিল্পিত অবয়বই তো সাহিত্য। শব্দের সঙ্গে সৌন্দর্যের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। গড়ে ওঠে আকর্ষণীয় সাহিত্য। ভাষার এ অভিজাত ও অলঙ্কারপুষ্ট জীবন। বিষয়, মনীষা ও বৈচিত্রে এ সাহিত্যের প্রাচুর্য ভাষায় ভাষায়, দেশে দেশে কম গড়ে ওঠে নি। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও কথাটি সমান প্রযোজ্য। কিন্তু বিষয়ের পবিত্রতা ও বিশ্বাসের সমৃদ্ধির আঙ্গিক থেকে দেখলে এখানেও সহজে ভেসে ওঠে সাহিত্যের দারিদ্র্যক্লিষ্ট মুখ। কিন্তু প্রত্যাশা ও প্রশান্তির প্রয়াস তো আর বন্ধ থাকে না। যেমন থাকে নি এই ‘সৌন্দর্যের সোনালি বাহনে’। মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ ভাষা ও সাহিত্যের কিছু বিশ্বাসদীপ্ত বিষয় ও মনীষার প্রসঙ্গ অত্যন্ত সাফল্য ও কৃতিত্বের সঙ্গে তুলে এনেছেন গ্রন্থভুক্ত প্রায় কুড়িটি গদ্যে। একদিকে এতে ফুঠে উঠেছে ভাষার সৃষ্টি ও ¯্রষ্টার কথা থেকে নিয়ে বিশ্বাস, শুদ্ধতা আর নবীজীর কাব্য-পর্যবেক্ষণ। অপরদিকে উন্মোচিত হয়েছে ইকবাল, আলী নাদভী, ফররুখ আহমদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ ও তকী উসমানীর জীবন ও কীর্তির বিভাময় ভুবন। সাহিত্যাঙ্গনের অলঙ্কারআশ্রয়ী গদ্য। প্রাঞ্জল ও সুদৃঢ়। সুখপাঠ্য এক মনোযোগী আয়োজন। বর্ণনার সাবলীল সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রায় নিবন্ধের শেষে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উদ্ধৃতির উৎস গ্রন্থের সামগ্রিক মানের সঙ্গে একটি গবেষণাসুলভ আমেজও উপহার দিয়েছেন। বলতে হয়, মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ সাহিত্যের ভাষায় সাহিত্যের বিষয় নিয়ে বিশ্বাসদীপ্ত ও ইলমগন্ধী একটি গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। লেখক মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহর সঙ্গে আমার পরিচয়ের সূচনা দশ বছরেরও আগে। শুধু তার প্রকাশিত বিভিন্ন লেখার মধ্য দিয়ে। সরাসরি সাক্ষাৎ আরো পরে। একটি বিষয় লক্ষ করে বিস্মিত হয়েছি যে, তরুণ এই আলেম ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো রকম পরিচিতি-যোগাযোগ ছাড়াই জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্যপাতায় নিশ্চিত একটি জায়গা করে নিয়েছেন। এটি একটি বড় ঘটনা, সাহিত্যের শক্তি ও প্রকাশনার বিবেচনায়। গভীর অভিনিবেশ নিয়ে চলা, ইলম, আমল ও সাহিত্য-সাধনানিমগ্ন এক অভিযাত্রী তরুণ আলেম তিনি। তার গভীর মনন, সুললিত বর্ণনা আর ইতিবাচক জীবন ও বীক্ষণের এ তোহফাটি হাতে নিলে, আশা করি, পাঠকমাত্রই উপকৃত হবেন। অনাগত দিনে তার হাতে আরো স্বর্ণফলনের অপেক্ষায় দিন গুনছি। ভাষা ও সাহিত্যের এই নেয়ামত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যথাযথ উপায়ে কাজে লাগানোর তাওফীক দান করুন। যার যার অঙ্গনে, যার যার উপযোগী করে। এবং সেই কাজগুলো কবুলও করে নিন। আমীন!