'বিক্রয় অভিধান' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ যে কোনো পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পোঁছানো পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ ও প্রক্রিয়া পার হতে হয়। একটি চমৎকার ও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করলেই নিশ্চিত হয় না যে, পণ্যটি ক্রেতার হৃদয় জয় করবে! পণ্যটি যদি ঠিক সময়ে ঠিক দোকানে উপস্থিত না থাকে তবে শত চেষ্টা করেও তার বাণিজ্যিক সফলতা নিশ্চিত করা যায় না। বিজ্ঞান ও শিল্পের সুন্দরতম প্রয়োগেই বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। চৌকস বিক্রয়শিল্পী তাঁর ক্রেতাকে পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত বিক্রয় কারিশমা প্রয়োগ করেন। সমগ্র বিপণন প্রক্রিয়ায় বিক্রয়শিল্পীর ভূমিকা অপরিসীম। ক্রেতা সাধারণ দোকান থেকে যে পণ্যসামগ্রী কেনেন, দোকানে সেই পণ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন বিক্রয়শিল্পী। বিক্রির সবচেয়ে আকর্ষণীয় কৌশল হচ্ছে মানুষকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা। আসলে কোনোকিছুই বিক্রি হয় না, বিক্রি করতে হয়! বিক্রয় হলো মার্কেটিং বা বিপণন-এর হিমশৈল অগ্রভাগ মাত্র। এটি বিপণন সংক্রান্ত অনেক কাজের অন্যতম। এই অভিধানে বিক্রয় ও বিপণন-এর বিভিন্ন দিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিক্রয় ও বিপণনকে যারা পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের তো বটেই, যারা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশুনা করছেন তাদেরও কাজে লাগবে বইটি। লেখক রাজিব আহমেদ বিগত দুই দশকে চারটি বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে এবং প্রশিক্ষণ হিসেবে যা কিছু শিখেছেন, সেইসব বাস্তব অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাই এই অভিধানের ভিত্তি। প্রত্যেক বিক্রয়শিল্পী ও ব্যবস্থাপকের জন্য এটি শুধু পাঠ্য নয়, অবস্যই সংগ্রহে রাখার মতো।
কেন এই অভধান? বিক্রয়কর্ম আজ পেশা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রতিনিয়ত আর্বিভাব ঘটছে বিভিন্ন কোম্পানির; বাজারে আসছে নিত্য নতুন পণ্য। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিক্রয়কর্মী ও ব্যবস্থাপকের সংখ্যা। আজকের যুগে ব্যবসায় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চাই বিপণন ও বিক্রয়ের গতি-প্রকৃতি বুঝে পণ্য ও সেবার ক্রমাগত মানোন্নয়ন করা। কেননা যে কোনো ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে ক্রেতা/ ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জন ও সম্প্রসারণের উপর। আধুনিক বিপণন ধারণা গড়ে উঠেছে এমন একটি প্রক্রিয়ার উপর, যেখানে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কর্ত্তৃপক্ষ লাভ নিশ্চিতপূর্বক ক্রেতা/ ভোক্তাদের প্রকৃত চাহিদা চিহ্নিত ও পূরণ করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। ক্রেতা/ ভোক্তাদের আকাঙ্খা ভালোভাবে বোঝা ও পূরণ করার মাধ্যমেই ব্যবসাকে লাভজনক তথা সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আমি ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে উচাচতর ডিগ্রি লাভের পর সুদীর্ঘ দশ বছর দু’টি বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক দ্রুত বিক্রয়যোগ্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এবং দু’টি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পেশাগত জীবনে আমি উপলব্ধি করেছি- বিক্রয় পেশায় যাঁরা আছেন বা নতুন যাঁরা আসছেন, ইচ্ছে থাকলেও তাঁদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। নেই কোনো সহায়ক নির্দেশিকা-যেটি পেশাগত জীবনে সহায়ক হতে পারে। সেই শূন্যতা পূরণে বিক্রয় প্রশিক্ষক হিসেব আমি বিক্রয় ব্যবস্থাপকদের সামবেশে ও বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয়জীবীদের সামনে আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি। এ পেশায় নবাগতদেরকে বিক্রির নানা কৌশল বাৎলে দেই। কিন্তু এবাবে এক জীবনে কতজনের কাছেই-বা পৌঁছানো সম্ভব? তাই তো রাতের পর রাত জেগে আমার এই ‘বিক্রয় অভিধান’ রচানার প্রয়াস। আমি এখানে বিক্রয় বিষয়ক আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাকে দুই মলাটের ভেতরে পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করেছি- যা কিনা বিক্রয় পেমায় নবাগতদের সহায়ক নির্দেশিকা হিসেবে কাজে লাগবে। আর যাঁরা ইতোমধ্যে বিক্রয় পেশায় আছেন, তাঁরা পাবেন পেশাগত মনোন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। যাঁরা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশুনা করছেন, তাঁদেরও কাজে লাগবে বইটি।
সূচিপত্র * বিক্রয় করিশরা-১১ * সাবার উপরে বিক্রি সত্য……..-১৫ * বিপণন ব্যবস্থাপনায় ক্যারিয়ার-১৮ * সমন্বিত বিপণন কৌশল-২৩ * যেভাবে নিজেকে গড়ে তুলবেন-২৫ * বিক্রয় প্রতিনিধির দৈনন্দিন কার্যাবলী-২৯ * বিক্রির খুঁটিনাটিঃ সবসময় পরিপাটি-৩৫ * ক্রয় ও বিক্রয় প্রক্রিয়া-৪১ * ক্রেতা/ ভোক্তা কেন কেনেন?-৪৬ * কার্যকর বিক্রয় কৌশল-৫২ * বিক্রয়ের বিশেষ কৌশল-৫৮ * কর্মদক্ষতা নিরূপণ-৬৩ * যেমন কর্ম তেমন ফল-৭৩ * কল-বিমুখতা জয় করতে হবে-৭৮ * লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রক্রিয়া-৮১ * বাজার তথ্য বিশ্লেসণ ও বিক্রয় পরিকল্পনা-৮৫ * মার্চেন্ডাইজিং-৮৯ * মার্চেন্ডাইজিং প্ল্যান-ও-গ্রাম-৯৮ * ক্রেতার শরীরের ভাষা-১০৮ * বিক্রয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব ও কর্তব্য-১১২ * চ্যানেল কী ও কেন?-১১৭ * দোকান দেখলেই দিবে হানা-১২৭ * সংখ্যাগত ও তুলনামূলক ডিস্ট্রিবিউশন-১৩২ * প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বর্ণালি সূত্র-১৩৫ * বিক্রি বাড়াতে মার্কেট ভাঙতে (!) হবে-১৩৯ * পণ্যের লাভ ক্ষতিঃ বিক্রয়ের গতি-প্রকৃতি-১৪২ * পণ্যের মূল্য নির্ধারণ কৌশল-১৪৫ * মূল্য নির্ধারণের নানাদিক-১৫০ * ট্রেড অফার ব্যবস্থাপনা-১৫৫ * ব্যবসায় সহায়ক কার্যাবলী ব্যবস্থাপনা-১৬২ * স্কিম ব্যবস্থাপনার উপকারিতা-১৬৬ * ইনোভেশন ব্যবস্থাপনা-১৭২ * স্টক ব্যবস্থাপনা-১৭৮ * পরিবেশক সমাচার-১৮২ * পরিবেশকের লাভ নিশ্চিত করার কৌশল-১৯০ * পণ্যের শ্রেণীবিভাগ-১৯৪ * বিপণন স্থান ও বণ্টন প্রণালী-১৯৯ * পাইকারি ব্যবসার নানাদিক-২০৯ * খুচরা ব্যবসার নানাদিক-২১৪ * বিক্রয় কমীবাহিনী ব্যবস্থাপনা-২১৯ * আধুনিক বিক্রয় ব্যবস্থাপনা-২৩৩ * কার্যকর যোগাযোগ-২৪৫ * সাক্ষাতকারঃ এনায়েত কবির-২৫৮ * বিক্রয়কর্মে ব্যবহৃত কিছু ইংরেজি শব্দের ব্যাখ্যা-২৬৪
জীবন ঘনিষ্ঠ বহুমাত্রিক লেখক রাজিব আহমেদ বাংলা মননশীল সাহিত্যকে ক্রমেই সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বিক্রয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০ অতিক্রম করে গেছে। বাংলাদেশে আত্মোন্নয়নমূলক অভিনন্দন লাভ করেছেন। রাজিব আহমেদ চারটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানিতে (রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, বাংলালিংক ও রবি) দশ বছরের কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়ে এখন মুক্ত বিক্রয় প্রশিক্ষক ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তা; জয় করে চলেছেন অসংখ্য বিক্রয় পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও দর্শক শ্রোতার হৃদয়। লেখালেখি তার নেশা আর ভালোবাসেন দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে।