জীবনানন্দ দাশ বেশ অহংকারের শক্তি নিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন : ‘…আমার মতন আর নাই কেউ!… আমার পায়ের শব্দ শোনো/নতুন এ, আর সব হারানো-পুরোনো।’ এই স্বভাব লিপ্ত আছে কবিতায় এবং পাঠকেরও জানা আছে সেই খবর। অথচ তাঁর সকল গদ্য রচনা-গল্প ও উপন্যাস-আমৃত্যু রয়ে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রকাশ পায়নি, প্রিয় ধন তবু আগলে রেখেছেন। এতেও আছে জীবনানন্দীয় স্বভাব! জীবনের উৎস যে রহস্যময় অন্ধকার! তিনিই ভেবেছেন সাহিত্যের বৈচিত্র্যময় আত্মজৈবনিকতা নিয়ে। তাই কথা ও কণ্ঠস্বরে কোনো ফাঁকি তৈরি হয় না, কেননা সাহিত্য জীবনেরই অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার নাম অস্তিত্ব, তার একটি বাতায়ন ইতিহাস-ঐতিহ্য; আর আকাশ-মাটিতে মিলে তৈরি হয় মনন; জীবন সজীব হয়, ফুল ফোটায় জীবনেরই রসে-সমাজও থাকে মিলেমিশে। এখানে পরিবার, দাম্পত্য বা প্রেম পরিচিতই, তবু জীবনভেদে অনন্য। জীবনের অনন্যতা ও অনন্য জীবন নিয়ে জীবনানন্দের ছোটগল্প। এ বাজারের স্পর্শে বিশুদ্ধতা হারায়নি। চিন্তায়ও নেই ব্যভিচারিতা, কেননা গল্প নিয়ে কারো মুখাপেক্ষী হননি। জীবনের অভিজ্ঞতা পবিত্র হাতে আগলে রাখার শিল্পরূপও জীবনানন্দীয়, জীবনের শৈলী-তার রঙ-রূপ। এই গ্রন্থ তাই আলোচনা নয়, জীবনানন্দের সাহচর্য লাভের চেষ্টা! জীবনানন্দ দাশ যে বোধের কথা বলেছিলেন, হাহাকারের মতো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন মহাকালের উদ্দেশে : ‘সকল লোকের মাঝে বসে/ আমার নিজের মুদ্রাদোষে/ আমি একা হতেছি আলাদা?’ -গ্রন্থটি বলতে চায়, এই একলা পথিকের পদক্ষেপে তৈরি হয়েছে বাংলা ছোটগল্পের ভিন্ন পথ। বুঝতে চায়, কবিতার মতো ছোটগল্পেও আছেন জীবনানন্দ দাশ
জন্ম ১৫ অক্টোবর ১৯৬৮; কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারে। পিতা : মোহাম্মদ হোসেন; মাতা : আমেনা খাতুন। শিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষা দেবিদ্বার উপজেলার মডেল ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের অধ্যয়ন। উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা সাহিত্য বিষয়ে বিএ অনার্স (১৯৯১) ও এমএ (১৯৯২)। উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প : জীবনজিজ্ঞাসা ও শৈলী-বিচার’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি লাভ (২০০৫)। কর্মজীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান, বর্তমানে অধ্যাপক পদে কর্মরত।