"ইসলামে নারীর অবদান" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন বিশ্বময় নারীর জীবনকে ক্রমাগত হতাশাজনক করে তুলছে। নারীকে তার আত্মপরিচয় থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। দায়িত্বশীল সম্মানিত নারীর অসম্মানিত ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ক্ষমতায়নে সমাজ বিভিন্নভাবে কলুষিত হচ্ছে। চরম অনিশ্চয়তা ও অন্ধকার অপেক্ষা করছে বিপথগামী নারীদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। অথচ, আল্লাহ রব্বুল আলামীন নারী-পুরুষের কিছু জিম্মাদারি রেখেছেন যৌথ, যাতে নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশীদার। আবার কিছু জিম্মাদারি রেখেছেন আলাদা আলাদা। এজন্য আমরা দেখতে পাই, অনেক ক্ষেত্রেই কুরআনে কারীমে একজনকে সম্বোধন করা হলেও তার লক্ষ্য থাকে নারী-পুরুষ দু’জনই। আবার কখনো দু’জনকেই আলাদা আলাদা সম্বোধন করা হয়। আলাদাভাবে আলোচনায় নিয়ে আসা হয়। নারীদের যে বিশেষ জিম্মাদারি রয়েছে, যাতে পুরুষের কোনো অংশীদারী নেই, তার গুরুত্বও কোনো অংশেই কম নয়। বরং তা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া কেবল মাতৃজাতির প্রতি অবিচারই নয় বরং গোটা মানবসভ্যতার জন্যই বিরাট হুমকি। আধুনিক সভ্যতা মানুষকে নারী-পুরুষের এমন সাম্যের প্রতি জোরদার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে মানুষের সৃষ্টিগত স্বাভাবিক ও ঐচ্ছিক উভয় স্বাতন্ত্র্য ও ব্যবধান সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যার ফলে এই উভয় স্বকীয়তা ও পার্থক্যের ফলে যে সুফল বয়ে আসার কথা, তা থেকে গোটা মানবজাতি বঞ্চিত হচ্ছে। সময় এসেছে এসব পশ্চিমা ধ্যানধারণা পোষণকারীদের এই ক্ষতিগুলোর দিকে এমন ভাষা ও উপস্থাপনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করার, যা তাদের মনে দাগ কাটতে সক্ষম। এমনিভাবে নারী-পুরুষের যৌথ এবং স্বতন্ত্র জিম্মাদারি ও দায়িত্বগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করাও প্রয়োজন। নারী, তার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং চিন্তাচেতনা বিনির্মাণ বিষয়ে মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী রহ. বিভিন্ন সময় ভেবেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন, কথা বলেছেন। সেইসবের একটি অনবদ্য সংকলন ‘ইসলামে নারীর অবদান’। অনুবাদ করেছেন, তরুণ লেখক হাসান মুহাম্মদ সানাউল্লাহ। বইটি প্রকাশ করতে পেরে মাকতাবাতুল হেরা গর্বিত।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।