"ক্যাডেট কলেজের টুকরো স্মৃতি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ২০০০ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাবার আগ পর্যন্ত তেত্রিশ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছি। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ বছর ক্যাডেট কলেজে কাজ করেছি। চাকরির একেবারে শুরুতে এক বছর পাকিস্তানের মিলিটারি কলেজ ঝেলামে জুনিয়র একাডেমিক ইন্ট্রাক্টর হিসেবে চাকরি করেছি। পরে চাকরির ১১/১২ বছরের মাথায় চার বছর একনাগাড়ে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময়ে অনেক কিছু দেখেছি, শুনেছি, শিখেছি, অনুভব করেছি, কিছুটা অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তার কিছু কিছু অংশ পাঠকদের সাথে শেয়ার করার তাগিদ অনুভব করছি। গল্পচ্ছলে যখন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের কাছে এসব দিনের কোনাে ঘটনা বলি, তখন কেউ কেউ সেগুলাে লিখে প্রকাশ করার জন্য অনুরােধ করেন। তাদের যুক্তি : এগুলাে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতের অভিভাবক, শিক্ষক, এমনকি ক্যাডেটরা পড়ে উপকৃত হতে পারে। সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার সময়ে রােজনামচা বা ডায়রি লেখার অভ্যাস বজায় রাখা নিরাপদ নয়, বিশেষ করে আমাদের মতাে দেশে। স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারলেও স্বাধীনভাবে বলা বা লেখা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯৭১ সালের পূর্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময়ে একজন বাঙালি অফিসারের জন্য কাজটি যারপরনাই বিপজ্জনক ছিলাে। তাই চাকরি জীবনের শুরু থেকে ডায়রি লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেনি। যা কিছু লিখছি তার সবটাই স্মৃতি থেকে। দিন, তারিখ, সময়ের হেরফের হতে পারে। লােকজনের নাম ভুল হতে পারে। বােধগম্য কারণে কোনাে কোনাে লােকের সঠিক নাম আড়াল করে ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হয়েছে। আমি ইতিহাস লিখতে বসিনি। আমি লিখছি আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা। সাধারণ বিবেচনায় এগুলাে নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও আমার কাছে, তখন মনে না হলেও, এখন মনে হয় এর মধ্যে কিছু অসাধারণ ঘটনা ছিলাে। যদিও সব ঘটনার নায়ক বা ভিলেন আমি নিজে নই। কখনও কখনও পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে ঘটনার সাক্ষী ছিলাম। তাই বর্ণনাতে ‘আমি’র আধিক্য থাকাটা স্বাভাবিক হলেও উদ্দেশ্য আত্মপ্রচার নয়। আশা করি পাঠক ক্ষমা করবেন। প্রয়ােজনে যাতে সহজে উল্লেখ করা যায় সেজন্য বর্ণিত ঘটনাগুলােকে একটি করে শিরােনাম ও ক্রমিক নম্বর দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এই বইয়ের প্রায় সব লেখা সময়ে সময়ে ফেইস বুকে খণ্ডিত আকারে ইতােপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। এবার সব লেখা নিয়ে একত্রে বই আকারে প্রকাশিত হলাে।