"মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১" বইয়ের সংক্ষিপ্ত লেখা: ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বাংলার ইতিহাস এবং বাঙালির গৌরবময় ঐতিহ্যের মণিকাঞ্চনে উজ্জ্বলতম হীরক খণ্ড। তাৎক্ষণিক বিচারে ১৯৪৭-পরবর্তী বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন আর ১৯৭১-এ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন বাঙালিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দেয়। কিন্তু এই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জন তাৎক্ষণিক ঘটনার ফল হতে পারে না। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার মানুষের হাজার বছর ধরে করা প্রতিবাদী আন্দোলনের ঐতিহ্য আর শক্তি। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতাকে ধারণ না করে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির স্বাধিকারের লড়াই অনুভব করা যাবে না। প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্গত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে না। দুর্ভাগ্য এই, যে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের মতো এত মহান আর উজ্জ্বল বীরগাথা রচনা করেছে জীবন উৎসর্গ করে, স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরও সে জাতি তার প্রজন্মের হাতে মুক্তিসংগ্রাম আর স্বাধীনতা অর্জ নের কথা জানার মতো আনুপূর্বিক সহজবোধ্য ইতিহাস গ্রন্থ তুলে দিতে পারেনি। প্রাসঙ্গিক অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন বিদগ্ধ লেখকগণ। তাই হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় দেশে-বিদেশে রচিত মুক্তিযুদ্ধের নানা ধারার দলিলপত্র, আঞ্চলিক যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক রচনা, সাক্ষাৎকার সঞ্চয়ন, নানা পার্শ্বিক বিষয় নিয়ে রচিত গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মূল্যবান গবেষণা গ্রন্থ ইত্যাদি। এরপরও শূন্যতা রয়ে গিয়েছে ইতিহাস রচনার নিয়ম-পদ্ধতি মেনে একটি পরিপূর্ণ ইতিহাস গ্রন্থ না থাকার। যা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে বোঝার জন্য প্রজন্মের হাতে তুলে দেয়া যায়। এই শূন্যতা পূরণের একটি চেষ্টা রয়েছে বর্তমান গ্রন্থটিতে। প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র ব্যবহার করে একদিকে যেমন ইতিহাস রচনার বিজ্ঞানমনস্কতার দাবি পূরণের সচেষ্ট প্রয়াস আছে তেমনি গবেষণা গ্রন্থের জটিলতা ও গাম্ভীর্য পরিহার করা হয়েছে গ্রন্থটিতে।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।