গল্পের নামে যখন বইয়ের নামকরণ হয় তখন সেই গল্পটি যে একটি বিশেষ গল্প তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘রহস্যময় পেন্সিল’ এ বইয়ের প্রথম গল্প। আর গল্পকার আমিনুল ইসলাম মামুন এ গল্পের নামেই বইটির নামকরণ করেছেন। এ ছাড়াও বইটিতে রয়েছে আরো ৯টি গল্প। গল্পগুলোর নাম হলো―ধূর্ত শেয়াল, সাদির বুদ্ধি, মাহির লাটিম, ভালো মানুষ, দুটি গাভীর গল্প, তানিমের পাখি, রাজপুত্র, পাখির প্রতি ভালোবাসা এবং পতাকা। প্রতিটি গল্পের নামকরণের মধ্যেই যেন গল্পের কাহিনির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। গল্পের রচনাকৌশল এতই নিপুণ যে পাঠককে গল্প থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না। বইয়ের প্রথম গল্প ‘রহস্যময় পেন্সিল’ তেমনই একটি গল্প। বিপ্লব নামের স্কুলপড়–য়া এক কিশোরের মন ভালো নেই! তার স্কুলের ড্রইং ক্লাসে তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কারণ সে ভালো ড্রইং করতে পারে না। পরীক্ষায় কোনোমতে টেনেটুনে পাস করে। একদিন তার সাথে এক মুসাফিরের দেখা হলো। সেই মুসাফির তাকে একটি পেন্সিল দিল। এর পর থেকে সে যা কিছুই আঁকে সবই অনেক সুন্দর আঁকা হয়ে যায়। এমনকি স্কুলের সবার চেয়ে তার ড্রইং ভালো হয়। এতে সবাই সন্দেহ করে! কী করে বিপ্লবের ড্রইং এত ভালো হচ্ছে! সবাই মিলে শিক্ষকের কাছে এর সমাধান চায়। অবশেষে মুসাফিরের দেওয়া সেই পেন্সিল একটি পুকুরে ফেলে দেয়। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এরপর সে নিজে নিজেই অনেক ভালো ছবি আঁকতে পারে। পাখি, শেয়াল রাজপুত্র এসব নিয়েও গল্প আছে এ বইয়ে। আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ওপরেও গল্প। পাঠকমাত্রই গল্পগুলোকে লুফে নেবে। বইটির একটি বিশেষ দিক হলো, প্রতিটি গল্পের মধ্যেই একটা শিক্ষণীয় বিষয় লক্ষণীয়; শুধু গল্প পড়ার জন্য গল্প নয়। ৪০ পৃষ্ঠার গল্পের বইটির প্রতিটি গল্পের সাথে রয়েছে চমৎকার সব আঁকা ছবি। বিভিন্ন পাঠাগারের সংগ্রহে রাখা ও স্কুলের পাঠ্য হিসেবে বইটির বেশ কিছু গল্প নির্বাচিত হতে পারে। মৌলিক গল্প বলে এসব গল্প পড়ে আলাদা স্বাদ পাওয়া যাবে। গল্প পড়ে যদি গল্প মনে থাকে আর সেই গল্প যদি বন্ধুদের সাথে বলা যায় তবে সেই গল্পই সেরা গল্প। তেমন সেরা গল্প এ বইটিতেও রয়েছে। অ্যাডভেঞ্চার কমিকস্ আহসান হাবীব প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কমিকস্ বলতে কী বোঝায়―‘কমিকস্ বা চিত্রকথা হলো একধরনের মাধ্যম, যেখানে চিত্র এবং লেখার দ্বারা কোনো ভাবনা প্রকাশ করা হয়। কমিকস্ প্রায়ই ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি প্যানেল বা চিত্রের রূপে থাকে। বিভিন্ন লৈখিক কৌশল, যেমন কথার বেলুন, আখ্যান এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দ কথোপকথন, বর্ণনা, বিভিন্ন আওয়াজকে নির্দেশ করে।’ বাংলাদেশে কমিকস্ নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আহসান হাবীব। বইটিতে ছয়টি কমিকস্ রয়েছে। প্রতিটি কমিকস্ই চমৎকার ও বুদ্ধিদীপ্ত। এই কমিকসের প্রধান দুটি চরিত্র পল্টু ও বিল্টু। পল্টু আর বিল্টুল নানা রকম কৌতূহল, অভিযান আর রোমাঞ্চকর সব বিষয় নিয়ে এই কমিকস্গুলো লেখা হয়েছে। শিশু-কিশোরেরা কমিকস্ পড়ে এতই আনন্দ ও প্রভাবিত হয় যে, কমিকসের চরিত্রগুলোর মতোই তারা হতে চায়। যদিও আমাদের দেশে বিদেশি কমিকসের বইয়ের সংখ্যা বেশি! এই কমিকস্ বইয়ের মধ্যে আমাদের দেশীয় যে সংস্কৃতির চর্চা খুব একটা লক্ষ করা যায় না। ২৪ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পূর্ণ রঙিন ও উন্নতমানের কাগজে ছাপা। মজবুত বাঁধাই। কমিকস্গুলোর নাম হলো―পল্টু-বিল্টুর এ্যাডভেঞ্চার, গোপন মিশন, মিরর ইউনিভার্সে অভিযান, বিল্টুর ঘুম, এ্যালিয়েন এবং মিথ্যা পদক। ‘এ্যালিয়েন’ নামক কমিকসে পল্টু আর বিল্টু ঘরে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ দড়জায় ঠকঠক আওয়াজ। পল্টু গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই দেখল এ্যালিয়েন দাঁড়িয়ে আছে! পল্টু এ্যালিয়েন দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল! এরপর কথোপকথনের মধ্যে এ্যালিয়েনই পল্টু আর বিল্টুকে বলে আমি এ্যালিয়েন! ছোটদের কৌতূহলের অন্ত নেই। এরা নতুন কিছু জানতে, শিখতে, দেখতে সর্বদাই উন্মুখ হয়ে থাকে। এদের যত বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক ও কল্পনা-উদ্রেক কাজে লাগনো যাবে ততই তারা হয়ে উঠবে মেধাবী। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমাদের বিশ্ব হাতের মুঠোয়। ফলে নানা বিষয়ে জানা খুবই সহজ। বিশেষ করে কার্টুন ও নানা রকম অ্যানিমিশন ফিল্ম ছোটদের সময় ভাগ করে নিচ্ছে। এর পরও বলব, বইয়ের বিকল্প নেই। হাতে নিয়ে কাগজের ঘ্রাণে পাওয়া আর নীরবে স্বপ্ন কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে বইয়ের বিকল্প কিছুই নেই। একটি ভালো বই একটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে। সবাই মিলে বইটি পড়লে সবাই মিলে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যাবে।
Aminul Islam Mamun আমিনুল ইসলাম মামুন বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত সাহিত্যিক ও সাহিত্য সাংবাদিক। জন্ম ১৯৭৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলাধীন রামগঞ্জ থানার পূর্ব বিঘা গ্রামে। পিতা মরহুম আলহাজ মাওলানা এ কে এম সিরাজুল ইসলাম ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। মাতার নাম আলহাজ শামসুন নাহার। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। আমিনুল ইসলাম মামুন ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে নোয়াগাঁও জনকল্যান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এস এস সি, ১৯৯৬ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি, ১৯৯৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও ২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে অর্জন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মহানগর ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি। ২০০৬ সালে ইনষ্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ-এর অধীনে জে ইউ আহমেদ এন্ড কোং থেকে শেষ করেন তিন বছর মেয়াদী কোর্স (সি এ - সি সি)। ২০১৩ সালে আয়কর আইনজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তালিকাভূক্ত হন। একই বছর বি আই ইউ থেকে এ গ্রেডে (প্রথম শ্রেণি সমমান) এম বি এ ডিগ্রি অর্জন করেন। অধিকতর সুন্দর ও সৃষ্টিশীল সমাজ বিনির্মানের উদ্দেশ্যে তাঁর লেখালেখি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দুষ্টু ছেলের দল (ছড়া), কানামাছি (ছড়া), মন ছুঁয়েছে মন (উপন্যাস), শিকল ভাঙার ছড়া (ছড়া), এক জীবনের গল্প (উপন্যাস), তারা জ্বলে কথা বলে (ছড়া), পরীর নাম লজ্জাবতী (শিশুতোষ গল্প), ভূত দেখেছি কয়েকবার (শিশুতোষ গল্প), ছড়ায় ছড়ায় বর্ণমালা (ছড়া), ঘুড়ির মাঠে আয় রে সবে (ছড়া), ঝুমঝুম রেলগাড়ি (ছড়া), হৃদয় ভাঙা একশ ছড়া (ছড়া) প্রভৃতি। ভ্রমণ তার শখের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ, ফিচার, গান, গ্রন্থালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয়েই লিখছেন। সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘তুষারধারা’ এবং বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্য বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল- ‘তুষারধারা ডট কম’-এর (www.tushardhara.com) সম্পাদক তিনি। আমিনুল ইসলাম মামুন জাতির মন ও মননের প্রতীক- বাংলা একাডেমি’র একজন সদস্য। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক- তরুণ লেখক ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- বাংলা সাহিত্য কেন্দ্র, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- অনলাইন রাইটার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা- সন্তান দিবস (১৫ নভেম্বর), প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- রামগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক একাডেমি, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- এইম স্পোর্টিং ক্লাব, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- ফমাসিক সাহিত্য সংসদ (ফতুল্লা-মাতুয়াইল-সিদ্ধিরগঞ্জ-কদমতলী এলাকার একটি সাহিত্য সংগঠন), প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উদ্যোক্তা- লিটল ম্যাগাজিন একাডেমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ লেখক পরিষদ। সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন- দানবীর হাজী মোহাম্মদ মুহসিন সম্মাননা-২০১১, মানব কল্যাণ পরিষদ লেখক সম্মাননা-২০১৪, রায়পুর তরুণ ও যুব ফোরাম বিশেষ সম্মাননা, স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য সম্মাননা-২০১৫, দুর্জয় বাংলা সাহিত্য সম্মাননা-২০১৫, আবাবীল সাহিত্য সম্মাননা-২০০৯, প্রতিভা প্রকাশ লেখক সংবর্ধনা ২০১১, বাংলাদেশ লেখক পরিষদ স্মারক সম্মাননাসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা।