"মঙ্গল পান্ডে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘বের হয়ে আসাে! তৈরি হও! এটা আমাদের ধর্ম রক্ষার বিষয়। এই কার্তুজে কামড় দিয়ে আমরা জাতভ্রষ্ট হয়ে পড়েছি।' ১৮৫৭ সালের মার্চের এক নিরুপ রােববারের বিকাল বেলা। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ৩৪তম নেটিভ ইনফেন্ট্রির এক উদ্যত সিপাহী বীরবিক্রমে ব্যারাকপুরের প্যারেড গ্রাউন্ডে তার সহযােদ্ধাদের সংঘটিত করছিল যাতে ধর্ম ও জাতের অপমানের বিরুদ্ধে সবাই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। ইনিই সেই ইতিহাস বিখ্যাত মঙ্গল পান্ডে যিনি একাই তার তরবারি হাতে ছুটে চলেন তার উধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে। আর ইতিহাসের পাতায় জায়গা করেন ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম সিপাহী হিসেবে। এভাবেই তিনি জন্ম দেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম গণঅভ্যুত্থানের। কিন্তু ইতিহাস কি কেবল ঘটনা বর্ণনায় সীমাবদ্ধ থাকে? কে ছিলেন সত্যিকারের এই মঙ্গল পান্ডে? তিনি কি সত্যিই ছিলেন। আমির খান অভিনীত ‘দ্য রাইজিং' চলচ্চিত্রের সেই সুগঠিত, প্রতাপশালী মহানায়ক? নাকি একজন আত্মঘাতী দেশপ্রেমিক যিনি দেশমাতৃকার সম্মান রক্ষায় নিজেকে আত্মবলিদান করেন? নাকি ছিলেন একটা খুব সাধারণ সৈনিক, যিনি ভাংএর নেশায় উন্মত্ত হয়ে এমন কিছু কাজ করে ফেলেন যার জন্য তাকে ফাঁসিতে ঝুলান হয়? রুদ্রাংশু মুখার্জীর এই বই প্রথাগত ভারতীয় ঐতিহাসিকদের ইতিহাস বয়ানের ট্যাবু চিরাচরিত প্রথা ভেঙ্গে চিন্তার উদ্রেক করে যেখানে অত্যন্ত পান্ডিত্যের সাথে তিনি উন্মােচন করেন এমন কিছু রহস্যের জাল যেটি হয়তাে এতােদিনকার জানা ইতিহাসকে নতুনভাবে জানতে সাহায্য করবে। একই সাথে তখনকার দিনের। সিপাহীদের দৈনন্দিন জীবন থেকে ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ এক অন্তদৃষ্টি প্রদান করবে যেটি চিরাচরিত জাতীয়তাবাদের ডামাডােলে হারিয়ে যাওয়া বাস্তব সত্যগুলােকে অনুধাবন করতে নিঃসন্দেহে অবশ্যম্ভাবী।