বই পরিচিতি এই কাহিনির কাল বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, মেক্সিকোর বিপ্লবের সময়। মেক্সিকোর গ্রামের এক পশুপালন খামারের হেঁসেল আর খামারবাড়ির মানুষজন নিয়েই এই কাহিনি আবর্তিত। গ্রামটি মেক্সিকো আর আমেরিকার সীমান্তে। কাহিনির নায়িকা তিতা - তিতা দে লা গারসা। উপন্যাসের বারােটি অধ্যায় বারাে মাসের নামে, জানুয়ারি থেকে শুরু, ডিসেম্বরে শেষ। প্রতিটি অধ্যায় একেকটি ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান রেসিপির নামে। আর প্রতিটি খাবারের সাথে জড়িয়ে আছে তিতার জীবনের নানা ঘটনা।
এই কাহিনির বক্তা, নায়িকা তিতার নাতনি। নাতনি বলে, জীবন সম্পর্কে তিতার জ্ঞানগম্যি রসুইঘরের চতুর্সীমানার মধ্যে আটকে ছিল। বাইরের পৃথিবীকেও সে এই অভিজ্ঞতায় বিচার করতাে। রসুইঘরে জন্ম নেয়া ও রান্নায় সর্বজ্ঞ নাচার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা তিতাকে বলা হতাে “রান্নার যাদুকর।” তার সব আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতাে খাবারের মধ্য দিয়ে। আবেগ সঞ্চারিতও হতাে খাবারে। এই কাহিনির শুরু থেকেই পাঠক জানতে পায় তিতার জীবনাচার চলছিল ভয়ানক অন্যায় অবিচারের মধ্য দিয়ে।
এই যেমন: তিতার মা এলেনা এক অকরণ, নিষ্ঠুর, আধা-উন্মাদ মহিলা - তার ধ্যানজ্ঞানই হলাে তিতাকে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখা। তিতা ভালবেসেছিল একজনকে। কিন্তু পারিবারিক প্রথা ও মায়ের চক্রান্তে তাদের সেই সম্পর্ক ভেস্তে যায়। সময়ে আরেক সহৃদয় যুবকের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে তিতার। তিতার বিরুদ্ধে দেশাচার, পারিবারিক আচার, দুর্ভাগ্য একনাগাড়ে ছিল। কিন্তু জন্ম থেকেই সে ছিল দারুণ লড়াকু মানুষ। সর্বশক্তি দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে, সৌন্দর্য-বুদ্ধি দিয়ে সে সমস্ত বিরুদ্ধাচারের মােকাবেলা করে।
তিতার কাছে রান্না ছিল দুঃখ-দুর্দশা উপশমের মতাে। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শারীরিক ও মানসিক নিষ্ঠুরতা, নানাবিধ অবদমন থেকে তাকে সাময়িক মুক্তি দিতাে ঐতিহ্যবাহী রান্নার নানা পদ। সেই সময় মেক্সিকোর গণনায়ক এমিলিয়ানাে সাপাতা, পাঞ্চো বিইয়ার নেতৃত্বে দেশটির কৃষক-শ্রমিক চলমান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। মানুষ চাইছিল মুক্তি, গণতান্ত্রিক মেক্সিকো - তিতা যেমন চাইছিল মা এলেনার হাত থেকে মুক্তি।
চরিত্রগুলাের ভিন্ন মাত্রিকতা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় উপন্যাসের কাহিনি। ভালবাসা, যুদ্ধ এবং ইতিহাসের মিশেল, যাদুবাস্তব এই পারিবারিক কাহিনি আসলে দিনশেষে যেন নারীর। অন্তর্নিহিত শক্তির মাহাত্মের আর নারীর দৃষ্টিতে দেখা জগতের কাহিনির প্রতিভূ হয়ে ওঠে।