"আড়াল" বইয়ের ভূমিকা: প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলে চারপাশের পৃথিবীতে। সেগুলাের কোনাে কোনােটা খুব মন ছুঁয়ে যায়, কোনাে পরম আনন্দের ঘটনার অংশীদার হতে ইচ্ছে করে প্রবলভাবে। আবার কোনাে কোনােটার জন্য মন খারাপের মেঘে। ছেয়ে যায় নিজের সমস্তটা আকাশ। চারপাশের এই ঘটনাগুলাের মধ্যে যেগুলাে। খুব নাড়া দেয়, সেগুলােই নিজের লেখার মধ্যে ধরে রাখবার, ছুঁয়ে দেখবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। এই বইয়ের গল্পগুলাে সেই সমসাময়িক ঘটনা থেকেই নেয়া যেগুলাে আমাকে ভাবিয়েছে কোনাে না কোনাে সময়। লেখাগুলাের সময়কাল গত চার বছর। বিভিন্ন সময়ে লেখা এই ছােটগল্পগুলাে আমার সেই সময়ের তীব্রতম অনুভূতি। একেবারে গ্রামীণ পটভূমির গল্প আছে এ বইয়ে, গ্রাম থেকে উঠে আসা পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষা করে বেড়ানাে যতীন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া ওর বউ চিনু, পকেটমার ভুলু, পাথরের কাজ করা নাহার সবগুলাে মানুষ আমার অনেক বেশি চেনা ছিল সবসময়, চেনা থাকবে আজীবন। ওদের কান্না-হাসিভালবাসা আর প্রতারণায় ভরা জীবন এই বইয়ের অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে। এ বইয়ে নাগরিক জীবনের চিন্তা-চেতনা, প্রবঞ্চনাগুলােও আছে প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে। সময়ের সাথে সাথে শীতল হতে থাকা নাগরিক সম্পর্কগুলাে, স্বার্থের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যাওয়া এককালের নিখাদ বন্ধুত্বের গল্পও আছে এখানে। আছে নিতান্তই একজনের মনােকষ্টের গল্প যে কষ্ট উজান থেকে তাকে তাড়িয়ে নিতে চায় ভাটির দেশে। গ্রামীণ আর নগরজীবনের নানা ছােট ছােট ভালবাসা আর দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস আর প্রবঞ্চনার গল্পগুলােই এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।