‘ভুল হতেই পারে এবং তা স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলের পথ পরিহার করার ইচ্ছে না থাকাটা অস্বাভাবিক। আমি ভুলের পথ বেছে নিয়ে জীবনের মহামূল্যবান সময়ের অপচয়ে কঠিন এক কষ্টে বেঁচে থাকা একজন মানুষ। মনুষ্যত্বের দায়বদ্ধতায় নিজের অতীতকে প্রকাশ করে দিতে সামান্যতম দ্বিধা বা ভয় আমার হয়নি। সাহিত্যের মান নয়, আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল আমার ভুলের গল্পগুলোর একটি আকৃতি দেয়া।’ প্রজন্ম তোমার জন্য বইটির লেখক অনুপ বড়–য়ার আত্মস্বীকৃতি দিয়ে বইটির পাঠ নেয়া যেতে পারে। সাহিত্য সৃষ্টি কেবল কল্পনার উপরেই নির্ভর করে না। অনেক সময় বাস্তবতাও শিল্প হয়ে ওঠে। ফুলের জন্ম তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে কিন্তু আমরা তার মধ্যে নান্দনিক দিকগুলো আবিষ্কার করি। জীবন অভিজ্ঞতা বা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে যে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তা পাঠকের মধ্যে দ্রুত সংক্রমিত হয়। পাঠকের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের সন্তান অনুপ বড়–য়া। তিনি ১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১২৮ পৃষ্ঠার এই গল্পের বইটিতে রয়েছে ২৯টি গল্প। দরজায় ছিটকিনি, অন্য একজন নুরু, ভাবনার সমান্তরাল, নীল ঘুড়িটির জন্য, এটেনশন প্লিজ, বন্ধু বন্ধু ইত্যাদি শিরোনামে সূচিবদ্ধ হয়েছে গল্পগুলো। ‘অন্য একজন নুরু’ গল্পটির মধ্য একজন মানসিক রুগীর আচার-আচরণ কীভাবে একটি শিশুমনে প্রভাব ফেলে তাই দেখানো হয়েছে। ছোটরা শৈশবে যা অনুকরণ করে তা হয়তো তাদের জীবনের পরিণত সময়ে তার একটা ছায়া দেখা যায়। এ গল্পটি সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। এ বইয়ে শেষ গল্পটির নাম ‘উকিল সাহেব’। বাবার স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে একজন উকিল হবে। কিন্তু ছেলে মাদকাশক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার জীবন হয়ে যায় এলোমেলো। ছেলের জন্য কিনে রাখা কালো উকিলের সুটের কাপড় ছেলেই বিক্রি করে মাদকের পয়সা যোগায়। তারপর জেলের জীবন আর নানা রকম মানুষের সাথে সান্নিধ্য। জীবনের অনেক না জানা অধ্যায়ে আলো ফেলেছেন লেখক অনুপ বড়–য়া। যার মুখোমুখি হলে আমরা আশ্চর্য হতে পারব, আমাদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারব ও একই সাথে নিজেদের ভুলগুলো অতিক্রম করে যেতে পারব।