ঈশপ ছিলেন একজন বিখ্যাত ও প্রাচীন গ্রিক গদ্যকার। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে তিনি পশু-প্রাণীদের নিয়ে অনেকগুলো উপকথা বা কল্পকাহিনি মুখে বলার মাধ্যমে অনেকগুলো নীতিকথা ব্যক্ত করে আধুনিক বিশ্বে অমর হয়ে রয়েছেন। দীপু মাহমুদ সেসব উপকথা থেকে বাছাই করে কয়েকটি উপকথা শিশু-কিশোরদের জন্য সূচিবদ্ধ করেছেন। সূচিবদ্ধ গল্পগুলো হলো― আসল বন্ধু, সিংহ ও ইঁদুর, শিয়াল ও সারস, খরগোশ ও কাছিম, বাঘ ও বক, ষাঁড় ও ব্যাঙ এবং ছাগলের বোকামি। ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রতিটি গল্পের সাথে রয়েছে রঙিন ঝকঝকে সব ছবি। যুগ যুগ ধরে পঠিত হওয়া এসব গল্প শুধু শিশু-কিশোরদেরই শিক্ষা ও আনন্দ দেয় না; সেই সাথে বড়দেরও সমান উদ্বেলিত করে। ‘আসল বন্ধু’ গল্পে দুই বন্ধুর কথা বলা হয়েছে। এখানে এ গল্পের মধ্য দিয়ে এই শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়েছে যে, বিপদের সময় যে পাশে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিগণিত হয়। পথের মধ্যে যখন ভালুক সামনে পড়ে তখন এক বন্ধু আর এক বন্ধুকে ভালুকের মুখে রেখে গাছের মাথায় উঠে যায়। কিন্তু যে বন্ধু নিচে থাকে সে বুদ্ধি করে মরার মতো পড়ে থাকে। ফলে ভালুক মনে করে এটা মরা মানুষ। আর মরা মানুষ ভালুক খায় না। ফলে বিপদগ্রস্ত বন্ধু তার বুদ্ধি দিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করে। আর তার স্বার্থপর বন্ধুকে সে চিনতে পারে এই বিপদের মধ্য দিয়ে। ‘শিয়াল ও সারস’-এর গল্পে দেখতে পাই শিয়াল সারসকে দাওয়াত দেয় কিন্তু তাকে খেতে দেয় একটি প্লেটে। প্লেট থেকে সে খেতে পারে না। সব খাবার শিয়াল একাই খেয়ে নেয়! সারস শিয়ালের চালাকি ধরতে পারে। পরের দিন শিয়ালকে সারসের বাড়ি দাওয়াত দেয়। শিয়ালকে খেতে দেয় একটা সরু কলসের মধ্যে কিন্তু শিয়াল সেই সরু কলস থেকে খাবার খেতে পারে না। তখন শিয়াল বুঝতে পারে যে সারসের সাথে সে যে চালাকি করেছে সেই চালাকি সারসও তার সাথে করল। ‘খরগোশ ও কাছিম’-এর গল্প তো এতটাই বিখ্যাত যে, এটা মুখে মুখে প্রচলিত একটি গল্প। কাছিমের গতি ধীর হলেও সে অবহেলা করে সময় নষ্ট করেনি। ফলে সে দ্রæতগতির কাছিমকে পিছে ফেলে দৌড়ে প্রথম হয়ে যায়। এ বইয়ে প্রতিটি গল্পই যেমন শিক্ষণীয় তেমনি মজাদার। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই।
দীপু মাহমুদ। জন্ম ২৫ মে ১৯৬৫, নানাবাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার গ্রাগপুর গ্রামে। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে দাদাবাড়ি হাটবোয়ালিয়া গ্রামে। বেড়ে ওঠা স্নেহময়ী, কালিশংকরপুর, কুষ্টিয়া। পিতা প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল হুদা, মা হামিদা বেগম। পড়াশোনা করেছেন কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতায়। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সায়েন্স ফিকশন সাহিত্য পুরস্কার, এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, শিশুসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী স্বর্ণপদক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বর্ণপদক, আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার, আবু হাসান শাহীন স্মৃতি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতিপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন সম্মাননা।