''শেষপত্র" বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : একদিন ফকফকা আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখি আমি অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাও আবার একই প্রজাতির অন্ধকার নয়। কোনোটা রক্তের মতো লাল। কোনোটা চিংড়ি মাছের মতো, তেলাপোকার মতো রক্তশূন্য। কোনোটা কুচকুচে কালো কয়লা। আবার কোনোটা ড্রেনের পানির মতো ময়লা। এমনি থৈ-থৈ অন্ধকারের মাঝে আমার আশপাশে কেউ নেই। আমি একা। শুধুই একা। সেই বাড়ন্ত কালবেলায় যে আমাকে দুহাত ধরে সত্যিকার আলোর দিকে টেনে এনেছে, সে হলো কবিতা। আমার প্রাণেশ্বরী কবিতা। যার কোনো অহংকার নেই, যে মানুষকে জাতে-পাতে, উঁচুতে-নিচুতে, আমীরে-ফকিরে বিচার না করে কেবল মানুষ হিসাবে বিচার করে। একজন শতভাগ মানুষ হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানায় । সেই থেকে আমি কবিতার সাথী হয়ে আছি। সে আমার সাথে কোনোদিন বেঈমানি করেনি। কোনোদিন কথার হেরফের করেনি। আমাকে গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নেয়নি। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার যা প্রাপ্য হওয়া উচিত তার একচুলও বেশি ভাবাবেগের ধার ধারতে দেয়নি। কবিদের ভাববাদী বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো ফুরসৎ দেয়নি। একটা সময় আমি অপার বিস্ময়ে চেয়ে দেখি, আমার ভেতর থেকে অন্ধকার গলে পড়তে শুরু করেছে। আমার দিব্য চোখের সামনে মহাবিশ্বের সমস্ত আলোকরশ্মি ঝিলিক দিচ্ছে। আমি বিমুগ্ধ চিত্তে সেই আলোর শতমুখী ঝর্ণাধারার দিকে চেয়ে আছি। এভাবেই কবিতার কাছে আমার ঋণ বাড়তে থাকলো দিন-দিন। এখন আমি আর একা নই। এখন আমার কবিতা আছে ।