"স্নায়ু দিয়ে চেনা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: আপাতদৃষ্টিতে দুটো মূল নারীসত্তাকে কেন্দ্র করে উপন্যাস এগিয়ে গেছে। হাসপাতালে খুন হওয়া সেতুকে দেখতে গিয়ে নুসরাত দুর্ঘটনার চক্করে পড়ে। তার অদ্ভুত আচ্ছাময় দিনগুলাে ক্রমশ স্থবির আঁধারিয়ার মধ্যে পাক খেতে থাকে। হাতের শােল্ডারটা অকেজো হতে থাকলেও নুসরাত তার আহত হাত নিয়ে নয়, ঘুর খায় তার সত্তায় আরেকটি ছায়ার উপস্থিতি নিয়ে। এদিকে পার্বত্য এলাকায় বাসরত টুনিবেবি পাক খায় তার শৈশবে পাহাড়ি জীবনের নানা স্মৃতির মধ্যে। তার প্রাণপ্রিয় ছােটভাই বুবলুকে মাটিতে ফেলে বাড়ি ছাড়া হয়েছিল সে। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রথমে স্বপ্নময়, পরে শান্তনু—এই দুইজন মানুষের সঙ্গে প্রেমজ সম্পর্কে ডুবজল খেতে খেতে সে চূড়ান্ত মাতাল জীবনের মধ্যে ভাসতে থাকে। নুসরাত অনুভব করে, সে একা নয়, তার আরেকটা সত্তা প্রায়ই তার ওপর ভর করে তাকে এক অসহ্য অনুভূতির মধ্যে ফেলে। টুনিবেবিও অনুভব করে, সে আদৌ কোনাে সম্পূর্ণ সত্তা নয়, সে যেন একটা খােলস। অন্য একটা দেহে সমর্পিত হওয়ার জন্য তার বােধে খাই খাই ক্ষিদে ওঠে। এর মধ্যে কুয়াশার মতাে মিশে থাকে নুসরাত আর টুনিবেবির জন্ম সময়। দুজন দু মায়ের ঘরে জন্ম নিয়েও যমজবােধে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জহির ক্যানভাস উদোম করে। দুটি সত্তা সেখানে একাত্ম হয়ে বাঁচার স্বপ্নে একীভূত হতে থাকে।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।