বড়রা বলে দুর্ঘটনা, অদৃষ্ট, মন্দ কপালের দোষ। বলে আরও কত সব কঠিন কঠিন শব্দ। ছোট্ট দশ বছরের অসীম এত সব বোঝে না। বোঝে তার নিঃসঙ্গতা। বোঝে তার চরম একাকিত্ব। বোঝে ছোট্ট বুকের ভেতরের দম বন্ধ করা এক অসহনীয় কষ্ট। তাদের বাড়িটা ছিল পৃথিবীর সেরা বাড়ি। অন্তত অসীমের কাছে তো তাই মনে হতো। মনে হতো, তাদের বাড়িটা আনন্দ, মমতা আর ভালোবাসার আবর্তে ঘেরা এক ছোট্ট স্বর্গপুরী যেন! এক মুহূর্তে, মাত্র এক লহমায় পাল্টে গেল সব! দুর্ভাগ্যের প্রবল স্রোতে ভেসে গেল সবটুকু সুখ। ভেসে গেল সবটুকু আনন্দ আর হাসি। সবটুকু 'ভালো' যেন দলবেঁধে পাড়ি জমাল দিগন্তের ওপারে। সব হারানোর যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে মা অসুস্থ হলেন। বাবা উদ্ভ্রান্ত দিশাহারা! অসীমের তো কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। এক মুহূর্তের সেই ওলটপালট তান্ডব বাবা, মা, অসীম কেউ মেনে নিতে পারলো না। অসহ্য সেই কষ্ট কিছুতেই যেন ম্লান হতে চাইল না। তাই তো বাবা বাড়ি ছেড়ে সকলকে নিয়ে যেন পালিয়ে এলেন সোনারপুরে। যেন সেই মর্মান্তিক কষ্টকে ঝেড়ে ফেলে আসতে চাইলেন ওই বাড়িতে। সোনারপুরের নূতন অচেনা বাড়ির বারান্দার কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে বসে ফেলে আসা সেইসব দিনের কথাই ভাবছিল অসীম।
জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮, ঢাকা। বাবা অধ্যাপক আবুদার রশীদ সাহিত্যিক, ছড়াকার এবং অনুবাদক। অনুবাদ সাহিত্যে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। পড়ালেখা করেছেন বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বাবার মৃত্যুর পর বাবাকে মনে পড়ে' শিরােনামে দৈনিক সংবাদে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালের। ডিসেম্বরে। এরপর ‘বালিকার চোখে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘আনন্দের এই ঝরণাধারা’, ‘ভূটান ভ্রমণ’, ‘বি’, ‘আঁধার কন্যা, ‘যুদ্ধ’ ইত্যাদি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও ‘পানুষ’ দৈনিক ইত্তেফাকে এবং ‘পেত্নীর ছানা দৈনিক সমকালে প্রকাশিত হয়। পরে বনফুলের হাতছানি, দিগন্তের ওপারে, লক্ষ্মী ছেলে, অন্যরকম মা, স্বর্ণরেণ. অসীম আকাশ, ভিনগ্রহের অভিযাত্রী নামে সাতটি গল্প ঈদসংখ্যা অন্যদিন-এ (২০১২-১৮) প্রকাশিত হয়। প্রথম গ্রন্থ ‘মেঘলার সােনালি দিন’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের একুশে বইমেলায়। এরপর বনফুলের হাতছানি (২০১২), দিগন্তের ওপারে (২০১৩), বন্ধুর বিজয় (২০১৪), মেঘের আড়াল থেকে (২০১৫), অন্যরকম মা (২০১৬), আঁধার কন্যা (২০১৭), রহস্যময় মেঘ। (২০১৮) গ্রন্থগুলাে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থসমূহের প্রকাশক অন্যপ্রকাশ। এটি এই লেখকের নবম প্রয়াস।