“যখন ছোট ছিলাম " বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এ-বইতে শুধু সেই ছােট্ট সত্যজিৎ রায়ের বড় হয়ে ওঠার কাহিনীই শােনাননি তিনি, সেই সঙ্গে শুনিয়েছেন এমন-এক পরিবারের কথা যে-পরিবার বাংলা সাহিত্যে একমাত্র ঠাকুরবাড়ির পরেই স্মরণযােগ্য। আর শুনিয়েছেন এমন এক কলকাতার কথা, যে-কলকাতা আজ মনে হয়। অচেনা ।। স্মৃতিকে সবাই ধরে রাখতে পারে না, সবাই পারে না স্মৃতিপটে ফুটেওঠা কাহিনীকে সরস ও স্বাদু করে শােনাতে। সত্যজিৎ রায় এই দুটো । কঠিন কাজই খুব সহজ করে আর সুন্দর করে। পেরেছেন। তাঁর স্মৃতি-অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারটি। যেমন মণিমুক্তোয় ঠাসা, বলার ভঙ্গিতেও তেমনই হীরের ধার এবং উজ্জ্বলতা। যখন ছােট ছিলাম’ বেরিয়েছিল সন্দেশ পত্রিকার দুটি সংখ্যায় বর্তমান গ্রন্থটিকে তার। পুনর্মুদ্রণ বললে নিতান্তই কমিয়ে বলা হবে। লেখা যেমন আমূল বদলে গেছে সম্পাদনায় আর আর সংযােজনে, ছবির ক্ষেত্রেও তেমনই বহু বদল, যােজনা এবং সংস্কার। নতুন করে বিস্তর ছবি এঁকেছেন সত্যজিৎ রায় এ-বইয়ের জন্য। যেমন, গড়পারের বাড়ি অথবা বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল। নতুন করে যেতে হয়েছে তাকে এ-সব জায়গায়, স্কেচ আঁকার জন্য। গ্রন্থাকার। ‘যখন ছােট ছিলাম’-এর আরেকটি বড় আকর্ষণ, পাতার পর পাতা জোড়া বহু দুস্প্রাপ্য ফোটো এবং ফ্যাকসিমিলি।
সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন অসম্ভব গুণী এই মানুষটি। ১৯২১ সালে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা। ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ বা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’র জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যার মধ্যে অন্যতম হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। তবে তাঁর কাজের সমালোচকও কম ছিলো না। এসব সমালোচনার উত্তরে লেখা দুটি প্রবন্ধ পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায় এর বই ‘বিষয় চলচ্চিত্র’-তে। কল্পকাহিনী ধারায় সত্যিজিৎ রায় এর বই সমূহ জয় করেছিলো সব বয়সী পাঠকের মন। তাঁর সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র ‘ফেলুদা’, ‘ প্রফেসর শঙ্কু’ এবং ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত। একের পিঠে দুই, আরো বাড়ো এমন মজার সব শিরোনামে বারোটির সংকলনে লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর বই সমগ্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘একেই বলে শ্যুটিং’, আত্মজীবনীমূলক ‘যখন ছোট ছিলাম’ এবং ছড়ার বই ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একাডেমি সম্মানসূচক পুরষ্কার' (অস্কার) প্রাপ্তি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।