"নিরুদ্দেশ যাত্রা" বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা: দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এসেছিল সজীবদের পরিবার, কিন্তু বাংলাদেশে স্থায়ী কোনাে ঠিকানা হয়নি তাদের। উদ্বাস্তু হলেও এই পরিবারের সবাই প্রাণপণে চেষ্টা করে এ দেশেরই অংশ হয়ে উঠবার। একজন মুক্তিযুদ্ধে যায়, আরেকজন অংশ নেয় সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলনে, আরেকজন এ দেশের নিসর্গের সঙ্গে গড়ে তােলে নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু তাদের বুকের গভীরে থাকে প্রশ্ন ও ক্ষরণ—এই দেশ কি তাদের? দেশ ও বাস্তুভিটার সঙ্গে সংযােগ বিচ্ছিন্ন হলে মানুষের জন্মপরিচয়ই যে সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে সে সত্যকে স্পর্শ করেছে নিরুদ্দেশ যাত্রা। এ উপন্যাসে সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। বিস্তারিত বিবরণ যেমন এসেছে, তেমনই। এসেছে দেশভাগ, বাস্তুত্যাগী মানুষের হাহাকার, দাঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ আর স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। কথাশিল্পী আহমাদ মােস্তফা কামাল তার সজীব গদ্যে বিবিধ আখ্যানের আলােকে একেছেন বিরাট এক সময়ের ছবি, নিয়ে এসেছেন বিশাল ব্যাপ্তি, এঁকেছেন এই সময়ের অস্থিরতা ও বন্ধ্যাত্ব, বৈকল্য ও বিকার, গ্লানি ও বেদনা, অসুখ ও স্থলন, যন্ত্রণা ও ক্লান্তিকে। সাজিয়েছেন মানুষের নিভৃত ও কোলাহলময় মুহূর্তগুলাে। সেই সঙ্গে এঁকেছেন অস্থিমজ্জায় জাগরূক আমাদের ছেলেবেলাকে—আমরা তার গন্ধ পাই, আলাে পাই, শব্দ শুনি।
Ahmad Mostofa kamal, জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯৬৯। পড়াশোনা করেছেন পাটগ্রাম হাইস্কুল, মানিকগঞ্জ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএসসি, এমএসসি, এমফিল এবং পিএইচ.ডি। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ কর্মরত। কিন্তু যাবতীয় বৈষয়িক সাফল্যের সম্ভাবনাকে নাকচ করে শুধুমাত্র লেখালেখিকেই তিনি জীবনের সকল স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছেন। লেখালেখির শুরু ’৯০ দশকের গোড়া থেকেই। প্রথম গল্পগ্রন্থ দ্বিতীয় মানুষ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর আরো সাতটি গল্পগ্রন্থ, ছ’টি উপন্যাস এবং চারটি প্রবন্ধগ্রন্থ বেরিয়েছে। এটি তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সংকলন। তাঁর চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য লাভ করেছে মর্যাদাপূর্ণ ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৩’ পুরস্কার। দ্বিতীয় উপন্যাস অন্ধ জাদুকর ভূষিত হয়েছে ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার’ ২০০৯-এ, এবং তৃতীয় উপন্যাস কান্নাপর্ব ২০১২ সালের শ্র্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে লাভ করেছে ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ ২০১৩।