৮পৃষ্ঠা ভূমিকা সংবলিত ও প্রতিটি গল্পে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সুভাষ সুতারের আঁকা ছবি সংযোজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের প্রথম চারটি দশক (১৮৬১-১৯৪১) ছিল তাঁর শৈল্পিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শের বিকাশপর্ব। যেমন- পারিবারিক প্রেক্ষাপট, শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১-১৮৭৮), ইংল্যান্ডে শিক্ষা ও শিলাইদহ। পারিবারিক প্রেক্ষাপট : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জোড়াসাঁকোর ৬নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পারিবারিক বাসভবনে। সে যুগের ‘ব্ল্যাক টাউন’ নামে পরিচিত উত্তর কলকাতার চিৎপুর রোডে (বর্তমান নাম রবীন্দ্র সরণি)। রবীন্দ্রনাথের পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) এবং মাতার নাম সারদা দেবী (১৮৩০-১৮৭৫)। শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১-১৮৭৮) : রবীন্দনাথ ছিলেন তাঁর পিতামাতার চৌদ্দতম সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠতম। ছেলেবেলায় রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য পত্রিকা, সঙ্গীত ও নাট্যানুষ্ঠানের এক পরিবেশে প্রতিপালিত হন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল সে যুগের বিদ্যুৎসাহী ও শিল্পোৎসাহী সমাজে এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। ইংল্যান্ডে শিক্ষা (১৮৭৮-১৮৮০) : ১৮৭৮ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে ব্যারিস্টার হওয়ার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে। প্রথমদিকে তিনি ব্রাইটন ও হোভের মেদিনা ভিলায় ঠাকুর পরিবারের একটি বাড়িতে অবস্থান করেন। এখানে তিনি একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন (যদিও বলা হয় যে তিনি ব্রাইটন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু উক্ত কলেজের রেজিস্টারে তাঁর নাম পাওয়া যায় না)। ১৮৭৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও কন্যা ইন্দিরাকে তাদের মায়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে থাকার উদ্দেশ্যে। ১৮৭৮ সালে চলে আসেন লন্ডনে। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ’ লন্ডনে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু কোনো ডিগ্রি না নিয়েই একবছরের মধ্যে ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শিলাইদহ : শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এখন একটি পর্যটক আকর্ষণ। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে পারিবারিক জমিদাদিদ তত্ত্বাবধান শুরু করেন। শিলাইদহে এক দশকে তিনি রচনা করেন বহু গ্রন্থ এবং বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করেন এক নতুন ধারা- ছোটগল্প। ১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে তিনি উনষাটটি ছোটগল্প লিখেছেন। বাংলাসাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি হিসেবেই আমাদের কাছে সমধিক পরিচিত। কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগাল্পিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাচিন্তক, দার্শনিক ইত্যাদি নানা পরিচয়ে তিনি বিশিষ্ট। এতসব পরিচয়ের ভিড়ে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবে রবীন্দনাথকে আমরা অনেক সময়ই ভুলে থাকি। শিশু-কিশোরদের স্বপ্নচারী ও কল্পনামুখী করার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের শিশু-সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। এ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের সর্বকালের সেরা কিশোর ছোটগল্প সংকলিত করা হয়েছে। যেমন- পোস্টমাস্টার, ইচ্চাপূরণ, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, কাবুলিওয়ালা, দেনাপাওনা, গিন্নি, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, বলাই, সম্পতি-সমর্পণ, কঙ্কাল, স্বর্ণমৃগ, ছুটি, অতিথি, সুভা, দান প্রতিদান, নিশীথে, আপদ, ঠাকুরদা, গুপ্তধন, মাস্টারমশাই ও রাসমণির ছেলে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।