ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা উনিশ’শ পঁচাত্তর সালের পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের ভেতর তাৎক্ষণিকভাবে প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে না ওঠায় অনেকের মনেই গভীর ক্ষোভ ও হত্যাশার সৃষ্টি হয়েছিল। কিছু একটা করার ব্যাকুলতাও দেখা দিয়েছিল অনেকের মধ্যেই। কিন্তু নেতৃত্ব ছিল অপ্রস্তুত এবং দ্বিধাদ্বন্বে আচ্ছন্ন। এই অবস্থায় ঘাতকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যাশা নিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই রাজনৈতিক নেতাদের একজন মোনায়েম সরকার। কলকাতায় অবস্থান করে মোনামেয় সরকার দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকের সঙ্গে চিঠি লিখে যোগাযোগ করতেন। মোনায়েম সরকারের কাছেও অনেকেই চিঠি লিখতেন। এইসব যোগাযোগের ফলে কলকাতা ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত হযেছল প্রতিরোধ, বাংলা ডাক, সোনার বাংলা, সান রাইজ, বজ্রকণ্ঠসহ কিছু সাপ্তাহিক পত্রিকা ও বুলেটিন এবং গড়ে উঠেছিল কিছু সংগঠন। মোনায়েম সরকারকে লেখা বিভিন্নজনের তিন শতাধিক চিঠি থেকে বাছাই করে প্রায় ২৫০ টি চিঠি নিয়ে প্রকাশ করা হলো ‘মোনায়েম সরকার যখন নির্বাসনে’ গ্রন্থটি। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বিশেষ কালপর্বের প্রতিচ্ছবি এই চিঠিগুলো পাঠককে মনে করিয়ে দেবে কী দুঃসময় আমরা অতিক্রম করে এসেছি। মুজিব-পরবর্তী বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের সূচনাপর্বটি পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া রোধ করতে এই গ্রন্থ একটি সহায়ক আকরগ্রন্থ বা উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিভুরঞ্জন সরকার। জন্ম ১৯৫৪ সালে। ষাটের দশকের শেষ দিকে স্কুল ছাত্র থাকাকালেই দৈনিক আজাদ-এর মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। লেখাপড়া শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে কাজ করেছেন। দৈনিক মাতৃভূমি, সাপ্তাহিক চলতিপত্রের সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক মৃদুভাষণের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আশির দশকে এরশাদবিরােধী আন্দোলনের সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে ‘তারিখ ইব্রাহিম' ছদ্মনামে লেখা তার রাজনৈতিক নিবন্ধ যথেষ্ট পাঠকপ্রিয় হয়েছিল। এখনাে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। নিয়মিত কলাম লিখছেন। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিম কর্মী ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ। সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী ছিলেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ১০টি, সম্পাদিত গ্রন্থ ৪টি।