একজন উঠতি প্রতিভা আর একজন প্রতিষ্ঠিত প্রতিভা—এ দু'য়ের জীবন ও জগৎ এবং শিল্প সম্পর্কে প্রত্যয়ের পার্থক্য বেপরোয়া তর্কের আবহাওয়ায় ঘুলিয়ে উঠে দুজনের মধ্যে যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছিল সাময়িক হলেও এভাবেই উভয়ের আগ্রহে এবারের মতো মিটে গেল। দুজনে দুপুরের খাওয়া খেলেন; বনে, বাগানে ঘুরলেন, প্রাণ খুলে নানা খোশগল্প করলেন, ভোজনান্তিক নিদ্রাও দিলেন একটু। এই করে দিনটা কেটে গেল। পরের দিন মাশা (মারিয়া) তার স্বামীকে নিয়ে হাজির হল। আর তক্ষুনি তুর্গেনয়েফের সমগ্র মনোযোগ গিয়ে পড়ল যুবতী মহিলার ওপরে। তাকে আদর আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। কিঞ্চিৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে পেরে তলস্তয় দেখতে পেলেন সবই। তাঁর মনে হল মাশার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ টের পায়নি তুর্গেনয়েফ কিংবা মাশার কিশোরীর মতো কোমল মুখ, অকপট কাথাবার্তা, নিটোল যৌবন সর্বোপরি তার স্বচ্ছন্দ চলাফেরার মধ্যে মগ্ন হয়ে গেছে। আজকে নয়, মাশার প্রতি তুর্গেনয়েফের এই টান অনেক আগে থেকেই। সে তাকে ‘ফাউস্ট’ গল্পটি উৎসর্গ করেছে। ভালবেসে ফেলেছে নিঃসন্দেহে। ভালেরিয়ান একটা আহাম্মুক। মাশার কাছ থেকে সে যতটুকু পেয়েছে সেই ওর ভাগ্য, সেই যথেষ্ট। সম্প্রতি আবার মানুষটা মাশাকে অবহেলা করতে শুরু করেছে সুতরাং এমন তো ঘটবেই। মাশা আর তুর্গেনয়েফের মধ্যেকার এ সম্পর্কটা আমার ভালই লাগছে। হাঁ, তুর্গেনয়েফের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব করা গেছে বুক ভরা এই তৃপ্তি নিয়ে তলস্তয় ফিরে এসেছেন য়াসনায়া পলিয়ানায়। মনে করেছেন এই যে বন্ধুত্ব হল এবার তা কালের ধকল অনায়াসে সইতে পারবে, আর ভাঙবে না কিছুতে কোন আঘাতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন তলস্তয়। কিন্তু মাত্র কয়েক মাস—তারপরেই টের পেলেন তুর্গেনয়েফের বিরুদ্ধে অসন্তোষের যে আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিলই হঠাৎ সেটা দপদপিয়ে জ্বলে উঠল জমি বণ্টন আর ভূমি দাস মুক্তি প্রসঙ্গ নিয়ে ।