একটা সময় আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন খুব একটা ভালো ছিল না তখন মানুষ নানা রকম বৈদ্য, ওঝা, কবিরাজের ওপর ভরসা করত। চিকিৎসার নামে এরা নানা রকম অপচিকিৎসা করত। এতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটত। কিন্তু দিন দিন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হলেও এখনো কিছু গ্রামীণ মানুষ আছে যারা চিকিৎসকের থেকে কবিরাজদের ওপর নির্ভর করে। আসলে এগুলো একধরনের সামাজিক কুসংস্কার। ‘টাইগার কবিরাজ’ এমনই একটি ভণ্ড কবিরাজের গল্প। মাহবুব লাভলুর লেখা বইটিতে রয়েছে আরো তিনটি গল্প। গল্পগুলো হলো―বাবার স্মৃতি, মায়ের হাসি ও পরিবন্ধু। মিঠুকে ভূতে ধরেছে―এ কথা গ্রামের মধ্যে প্রচার হয়েছে। মিঠু সন্ধ্যাবেলা বাইরে দাঁড়িয়ে পিঠা খেয়েছে, তাই তাকে ভূতে ধরেছে বলে মনে করছে ওর দাদি। মিঠুর শরীর কিছুক্ষণ পর পর লাল-নীল হয়ে যায়। ব্যথায় কাতরায়। কিন্তু কেউ ওকে হাসপাতালে নিতে চায় না। খবর দিয়ে টাইগার কবিরাজকে আনা হয়। দেখতে হালকাপাতলা হলেও গর্জন দেয় ভয়ংকরভাবে। সেও বলে ওকে খুব খারাপ ভূতে ধরেছে। এর জন্য আমার আস্তানায় নিয়ে যেতে হবে। এরপর জিনের বাদশাহকে দিয়ে মিঠুর ভূত তাড়াতে হবে। ভূত তাড়ানো তো দূরের কথা মিঠু আরো অসুস্থ হয় পড়ে। এরপর অসুস্থ মিঠুকে হাসপাতালে নেওয়া হয় ডাক্তারের কাছে। তখন ডাক্তার বলেন, আরেকটু দেরি হলে রোগীকে আর বাঁচানো যেত না। বন্ধুরা তোমরা যারা গ্রামে কিংবা শহরে বসবাস করো তারা যদি এমন দেখো তবে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে। যেকোনো রোগ বা অসুস্থ হলে প্রথমেই ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার যে চিকিৎসা দেবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। কখনোই ভুল মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যাবে না। ৩২ পৃষ্ঠার এ বইটির বাকি গল্পগুলো অনেক ভালো লাগবে। শিশু-কিশোররা যখন বেড়ে ওঠে তখন তাদের নানা রকম শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এগুলো সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা তৈরি হলে বড় হলেও সেই ধারণা থেকে যায়। আর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই একধরনের বিশ্বাসবোধ থাকে। সেই বিশ্বাসবোধে যখন মিথ্যা কিছু জড়িয়ে যায় তখন সেখান থেকে তাদের বের করে আনা খুব কঠিন। তাই কুসংস্কারমুক্ত জীবন গঠন করতে এ ধরনের বই পাঠ করা উচিত।