নদী কারাে নয়’ সৈয়দ শামসুল হক-এর লেখা শেষ উপন্যাস। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তিনি উপন্যাসটি মাসিক কালি ও কলম’-এ লিখতে শুরু করেন এবং ২০১৬-র এপ্রিল মাসে শেষ কিস্তি লেখেন । এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে প্রয়াত হন। ফলে উপন্যাসটি আর শেষ করা হয়ে ওঠে না। তিনি এই উপন্যাসটি লেখার সময় সচেতনভাবে কিছু কিছু লিখিত অংশের পুনরাবৃত্তি করেন এবং এভাবে লেখার ব্যাখ্যাও একটি আলাপচারিতায় উল্লেখ করে যান। মইনুল হােসেনের মনে হাহাকার—ওই যারা কাছারির মাঠে পাকিস্তানের নিশান নিয়ে নাচানাচি করছে, তাদের কি জানা নাই আধকোশা আর আমার দেশের নদী নয় ? র্যাডক্লিফ সাহেবের লাল পেন্সিলের দাগে আধকোশা এখন হিন্দুস্তানের! জলেশ্বরীর পাড় বরাবর নদীই এখন হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের সীমান্ত। হাহাকার আজ থেকে নদী তবে আর আমার নয়! এই আধকোশা এতকাল পরে তবে পর হয়ে গেল। এখন সে সীমান্তের ওপারে! আর, সীমান্তই কাকে বলে ? কোনাে রেখা তাে দৃষ্টিপথে নাই। আছে! র্যাডক্লিফ সাহেবের টেবিলে বিছানাে বাংলার মানচিত্রের বুকে লাল পেন্সিলের দাগ! যেন রক্তধারা! রক্তের রেখার ওপারে এখন আধকোশা। ওপারের ওই বালি-বিস্তীর্ণ পাড় আর আমার নয়। ওপারের ওই ঝাউগাছ আমার নয়। ঝাউগাছের ভেতর দিয়ে বহে যাওয়া বাতাসও আর আমার নয়! বালির বুকে ওই ঘূর্ণিও আমার নয়। খেয়াঘাটের ওই বিরলে যে শনের ছাপড়া চোখে পড়ে, ওই যে সেই ছাপড়ায় চা বানায় হাশমত, তার চুলার আগুনও আর আমার নয়, তার গেলাশের চা-ও আর আমার নয়, তার ছাপড়ার আড়ে ঝুলানাে মালভােগ কলার ছড়াও আমার নয়, ওই পায়ে চলা পথের চিহ্ন আর আমার নয়, ওই সরু পথটির উঠে যাওয়া ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের সড়কে, তাও আর আমার নয়। আর আমার পায়ের তলায় তার ধূলি না লাগিবে হে! অন্য দ্যাশের ধূলি হয়া গেইছে আইজের ফজরে। ওপারের ওই আসমানও বুঝি পর হয়া গেইছে। সব মিছামার হয়া গেইছে গাে। বুক ভাঙি নিয়া গেছে ঢলের আগেই এ কোন ঢল কোন পর্বত হতে নামিয়া! ফলে সম্পূর্ণ এক বিশৃঙ্খল এবং বিসদৃশ্য জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন এই ‘নদী কারাে নয়’-এর ভেতরে বড় বেদনাদায়কভাবে প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে।
জন্ম : ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ প্রয়াণ : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ পুরস্কার : আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসরিউদ্দনি র্স্বণপদক, জেবেন্নুসা-মাহবুবউল্লাহ্ র্স্বণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।