দুজন নারী পুরুষের সম্পর্কের সূত্র ধরে ফিরে দেখা একাত্তর এই উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। দীপুর মুক্তিযােদ্ধা বড় ভাই তপু যুদ্ধের শেষ দিকে সীমান্ত থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। সত্যিই সে শহীদ হয়েছিল কিনা কেউ জানে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় এলেও পরিবারটি কোনাে সুযােগ সুবিধা গ্রহণ করেনি বরং এগারাে বছর সরকারি চাকরি করার পরে অজ্ঞাত কারণে। তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় মেহেরপুরে। মা বিধবা বড়বােন এবং বােনের ছেলে অতনুকে প্রায় অভিভাবকহীন অবস্থায় রেখে নতুন কর্মস্থলে চলে যায় আসিফ মাহমুদ দীপু। প্রকৌশলী শফিউদ্দিন তালুকদারের শারীরিক মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত তার সুন্দরী স্ত্রী মেহনাজ মানসিক আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল আসিফের কাছে। দূর সম্পর্কের লায়লা ভাবীর প্রশ্রয়ে মেহনাজ আসিফের সম্পর্ক যখন দ্রুত ডালপালা বিস্তার করছিল তখন আকস্মিক বিপর্যয়ের মতাে দীপুর অনুপস্থিতি দুজনকেই সার্বক্ষণিক কষ্টের মধ্যে ঠেলে দেয়। মুক্তিযােদ্ধা তপুর বন্ধু এবং সহযােদ্ধা রাশেদ দীপুর মেজবােনকে বিয়ে করে গ্রামেই থেকে গেছে। তার কাছেই সে জেনেছে, শুধু পাকিস্তানিদের সাথে লড়াই নয়, যুদ্ধে যােগ দেয়াটাও কতােটা কঠিন ছিল! মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে থেকেও একদল মানুষ ষড়যন্ত্র করে চলেছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে। ‘মেয়েটি যুদ্ধের কথা ভুলে গেছে’ প্রচলিত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস নয়। ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া এই কাহিনীতে দীপু এবং মেহনাজের স্মৃতি ও বিস্মৃতি মাঝে মাঝেই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় যুদ্ধের। দিনগুলােতে। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কেমন করে একটি পুরাে প্রজন্মকেই ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং শত্রুরা সমাজে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল সে কথাও উঠে এসেছে কখনাে দীপু এবং কখনাে তার দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বাবার কথায়। আনন্দঘন এক নিভৃত বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে মেহনাজের নেতিবাচক ধারণা আবিষ্কৃত হবার পরে দুজনের নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে যায়। আসিফ বুঝতে পারে, তার অবস্থান এখন যুদ্ধ ও প্রেমের একটি মধ্যরেখােয়। রাজনীতির বাইরে দীপু যদি আদিগন্ত বিস্তৃত বাংলাদেশের মাটিতে এসে দাঁড়ায় মেহনাজ কি। তখন তার বৃত্তাবদ্ধ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে পাশে দাঁড়াতে পারবে?
স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ। ১৯৬৯ সাল থেকে শিশুকিশোর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ছড়ার বই ‘উল্টো গাধার পিঠে’। এরপরে লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, ভ্রমণ কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ইত্যাদি। গল্পকার হিসেবে অর্জন করেছেন বিশেষ খ্যাতি। গল্প রচনায় তাঁর একটি নিজস্ব ধরণ রয়েছে। অভিজ্ঞতার সাথে জ্ঞান ও মেধার সমন্বয়ে তাঁর গল্প একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য পায়। চমৎকার তার বর্ণনাভঙ্গি। তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি। বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলেন নিপুনভাবে। ভাষাগত দক্ষতা লেখকের অন্যতম বৈশিস্ট্য। তাঁর ভাষা সাবলীল, বলিষ্ঠ, প্রাণবন্ত। কৈশোরে অর্জন করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। মুক্তিযুদ্ধ তাঁর রচনা একটি মূল সূর। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গতিপ্রকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের শক্তি ও প্রেরণা একেবারে ভেতরের রূপটিকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন তার বেশ কিছু রচনা। আপন অভিজ্ঞতার আলোকে কিশোর তরুণদের শক্তি, সাহস ও উদ্দীপনাকে উপলব্ধি করতে পারেন বিশেষভাবেÑ যার ছবি পাওয়া যায় তার কিশোর গল্প-উপন্যাসে। লেখকের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলার তালোড়ায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। পুণের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। পেশাগত জীবনে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নাটক ও প্রামান্য চিত্র নির্মাতা। প্রকাশিত গ্রন্থ : গল্প : মরণোত্তর, পাঁচটি প্রেম ও একটি যুদ্ধের গল্প, আরশি বিলাস, সুন্দরী ও কাঁকড়া।