"বিস্মরণের চাবুক" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: জীবন এক জ্ঞানভয়, ঘুম ভেঙ্গে সে দেখছে সর্বনাশ হয়ে গেছে কোথাও। জানালার বাইরে যুগ পেরােচ্ছে ইতিহাস। তাকে দেবার ডুমুরটি কই, করতল কেন ফাঁকা আমার? অনেক বাতির বাসনায় জর্জর শহরের গল্প এ নয়। গ্রামীণ রাত্রির ভাষায় তাকে পাবে। স্তব্ধতা আর ফুঙ্কারের এ ভাষা পড়ানাে হবে মূক ও বধির শ্রেণীর বিদ্যালয়ে। পড়ামাত্রই মুছে যায় এমন বর্ণমালায় রচিত বিস্মৃতির এই ভাষা। দুচোখে দুটি ছিন্ন শিমুলের কুঁড়ি নিয়ে শরশয্যায় সুচরাজা। খুঁটে খুঁটে আয়নার পারদ তুলছে মেয়েটি। দেয়ালে দেয়ালে নিজেরই গুম হওয়ার খবর খুঁজছে। ছেলেটা হুতাশে মরে যায় লােক। স্তব্ধতায় পুড়ে যায় আরাকান। কারবালার আকাশে ওড়ে কুরুক্ষেত্রের রক্তিম ধুলা। আরাফাতের ময়দানে আদমের হাহাকার, ‘কাবিলের পিতা আমি, কাঁধে হাবিলের লাশ। সীমান্তে সীমান্তে করি, হাওয়া তােমার তালাশ!’ যখন তােমার সব শেষ তখন তুমি কী করাে পিতামই? পৃথিবীতে যখন আর নদীর নামে কোনাে ঠিকানা হবে না মানুষের, তখন নিমছায়া খালের বাঁকে বৃষ্টিতে অবতীর্ণ হবে এক কবি। তার শরীর থেকে ঝরবে ভরি ভরি বালি। সে খুঁজছে তমােহা ডুমুর, যার বুকে লুকানাে ফুলটিই শুধু পারবে কালিগুঁড়া ঝরানাে। মহাপাখিকে বাঁচাতে। ইরেজারহীন পেনসিল লিখতে লিখতে ক্ষয় হচ্ছে আর বলছে, ‘ব্লেড হাতে নিয়া আসিও, প্রখর করিও লিখিবার আগে। তারও দেহ নাই, আছে বকুলের কিছু অবশেষ। মেঘের মতাে নদীও ঝরতে ঝরতে সরে, নাচতে নাচতে ময়ূর। চলে যাবার এইসব দিনও বৃথাই চলে যাবে। রেলসুড়ঙ্গের অন্ধকারে প্রেরিত বাতাস তােমাকে ছোঁবে। আর চিরকালীন বিদায়ের হাতটা নেড়েই চলেছে পেরেকবিদ্ধ এক আগরগাছ। তাই পাঠিকা, যেতে হলে এর ভেতর দিয়েই যাও।