পুটনিক প্রেয়সী উপন্যাসে কাহিনির কাঠামাে হলাে। ত্রিকোণ প্রেম। সেই কাঠামােয় অস্থি-মজ্জা হিসেবে যােগ। হয় প্রতিদানহীন ভালােবাসা, অবাস্তবায়িত উচ্চাকাঙ্খ, রূপান্তর, স্বপ্ন, প্রতিরূপতা ও একাকীত্ব। উপন্যাসের কথক ভালােবাসে তার উড়নচন্ডী বান্ধবীকে, কোনাে। সমকামী ঝোক না থাকা সত্ত্বেও সেই বান্ধবীর মুগ্ধতা আবার তার থেকে সতেরাে বছরের বড় এক স্বাধীনচেতা, সফল ব্যবসায়ী নারীর প্রতি এবং সেই নারী। তার নবলব্ধ যুবতী বান্ধবীকে অসম্ভব পছন্দ করলেও তার অতীত জীবনের এক রহস্যময় ঘটনার কারণে তার। কাছে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে না। এই তিন। মুখ্য চরিত্রই একে অপরের চারপাশে গ্রহের চারদিকে উপগ্রহের মতাে ঘুরতে থাকে। নাগরদোলার। খােপগুলাের মতাে তাদের মধ্যে সমদূরত্ব বজায় থেকেই যায়। এদের টানাপােড়েনের ফাঁকে ফাঁকে এসে হাজির। হয় আরও বেশ কিছু চরিত্র যারা কাহিনির মূল প্রবাহ। থেকে পাঠককে বের করে নিয়ে এসে কিছুক্ষণের জন্য। ঘুরিয়ে নিয়ে আসে শাখানদীর স্রোতে। মােলদাউ নদী, গ্রিসের অনামা ছােট্ট দ্বীপ, সুন্দর জনবিরল সমুদ্রতট। যেখানে সবাই নগ্ন হয়ে স্নান করে, তীব্র সূর্যালােকে ভূমধ্যসাগরের ঝিকিমিকি, মাঝরাতে পাহাড়ের উপর থেকে ভেসে আসা রহস্যময় সংগীত, অ্যাক্রোপলিসের ঠান্ডা পাথরের ফলক- এই সবই আসলে উপন্যাসের। চরিত্রদের সাথে সাথে পাঠকের মনেও জাগিয়ে তােলে সেই আর্তি: “আমাকে আরুয়ান্দায় নিয়ে চলাে।” মুরাকামি এই উপন্যাসে পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে। শুরু করে আধুনিক বসা নােভা সংগীত পর্যন্ত সাবলীল। বিচরণের মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে চান। আরুয়ান্দা নামক সেই কল্পরাজ্যে যা পরিবর্তনের আত্মিক মাত্রারূপে পৃথিবীকে পরিক্রমণ করতে থাকবে।