"ভ্রমণসমগ্র ১ম খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে দেশভ্রমণ মানবস্বভাবের অন্তর্গত। জীবনধারণের উপকরণ সন্ধানে শুধু মানুষ নয় পশুপাখিরাও এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায়। খাদ্যান্বেষণ, রাজ্যদখল, আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানুষ কখনও অজানাকে জানার জন্য, কখনও জ্ঞান অর্জনের জন্য, কখনও ধর্মপ্রচারের জন্য, কখনও জীবিকার প্রয়ােজনে, কখনও পেশাগত প্রয়ােজনে অন্যদেশ ভ্রমণ করে তার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছে এবং এভাবেই ভ্রমণকাহিনী বা ভ্রমণসাহিত্যের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছে। ভ্রমণকাহিনীতে ভিন্ন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইতিহাস ও ভূগােল ছাড়াও জানা যায় ভিন্ন। মানুষকে যাদের ভাষা-গােত্র-বর্ণ-ধর্ম পৃথক হলেও সবার উপরে তারা মানুষ। এই জানার ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে মানবতাবােধ। লেখকের ভ্রমণকাহিনীতে সর্বজনীন মানবতাবাদ সব। সময় গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তিগত বিনােদনের জন্য ভ্রমণ তাঁর জীবনে কদাচিৎ ঘটেছে। পেশাগত প্রয়ােজনে যখন ভ্রমণ করেছেন তখন সব রকম মানুষের সঙ্গে মেলামেশার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতা-বিত্ত নির্বিশেষে মানুষকে জানবার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে তাঁর ভ্রমণসমগ্রে পেশাগত প্রয়ােজনে গ্রহণ করা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি শিল্পী-সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা সেসব দেশের সেই সময়ের রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। লেখক প্রথমবার চীনে গিয়েছিলেন মাও পরবর্তী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বােঝার জন্য। দ্বিতীয়বার গিয়েছিলেন সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে জানার জন্য। এসব জানার ফাঁকে চীনের প্রাচীর, নিষিদ্ধ নগর, মৃতনগরী বা স্বর্গের হৃদ দেখার আনন্দের অংশীদার করতে চেয়েছেন পাঠকদের। পূর্ব। ইউরােপের সমাজতন্ত্রের পতন সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী লেখকের বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী এবং ‘ক্রান্তিকালের মানুষ তাদের পড়তে হবে। লেখক। বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে কীভাবে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন—ভ্রমণসমগ্র পাঠ করলেই পাঠকরা তা অনুধাবন করতে পারবেন।