ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য একজন চিকিৎসক। তার জন্ম ১৯৬৭ সালে। তিনি বগুড়া জেলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্যের বড় ছেলে। চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনা করলেও বর্তমানে তিনি এ পেশায় যুক্ত নন। সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচালনা করছেন একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী। পিনাকী ভট্টাচার্য প্যারিসে বসবাসরত একজন বাংলাদেশী ব্লগার এবং সোশ্যাল একটিভিস্ট হিসেবেই অধিক পরিচিত এবং সমাদৃত। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর একজন এডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি। সেখানে তিনি এনভারমেন্টাল টক্সিকোলজি পড়ান। এক সময় বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ১৮টি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন । বর্তমানে তিনি একজন জনপ্রিয় অনলাইন একটিভিস্ট। ফেসবুকে তার দুই লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। টুইটারেও তিনি সক্রিয় আছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস, সমাজ, চলমান রাজনীতি, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিপীড়ন এবং বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ক তার অনলাইন লেখালেখি তরুণ ছাত্রসমাজ এবং অন্যান্যদের মাঝে সমাদৃত। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে একটি মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে সন্দেহভাজনদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। পিনাকী ভট্টাচার্য তীব্রভাবে এই বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনা করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আহূত কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দাবিতে পিনাকী ভট্টাচার্য ফেইসবুক এবং টুইটারেও ছিলেন সমান সোচ্চার। তার ফেসবুক এবং টুইটার পোস্টগুলোতে তৎকালীন আন্দোলনকারীদের উপর সরকারপন্থি গোষ্ঠীর আক্রমণের কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরেন তিনি। পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুক, টুইটার এবং ব্লগের পোস্টগুলোতে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ক্ষমতাশীন সরকারের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অপহরণ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনা করে আসছেন। তাঁর পোস্ট এবং টুইটগুলি প্রায়শই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে। অতি সাম্প্রতি তিনি অনলাইনে প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন একাধিকবার। ৫ আগস্ট ২০১৮। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান। শিক্ষার্থীদের নায্য আন্দোলন সমর্থন করায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঠিক সেই সময়ে সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পিনাকীকে ঢাকায় তাদের সদর দপ্তরে ডেকে পাঠায়। কেন তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল সেই বিষয়ে বিস্তারিত তারা কিছু বলেননি। নজির রয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারাবিরুদ্ধমত পোষণকারীদের দপ্তরে যাদের ডেকে পাঠায়, তারা সামরিক গোয়েন্দাদের সাথে দেখা করার পর তাদের অনেককে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করতে না গিয়ে আত্মগোপনে চলে যান পিনাকী। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা একাধিকবার পিনাকীর বাসস্থান এবং অফিসে অভিযান চালিয়ে তাকে খুঁজেছিলেন। এমনকি তারা তাঁর বাসস্থানকে চব্বিশ ঘন্টা নজরদারির মধ্যে রাখেন।আত্মগোপনে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষ তার দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন— পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন, গণিত, আইসিটি ইত্যাদির উপর বাংলাদেশে প্রচুর বই লেখা হয়েছে। বলা যায়, গত দুই দশকে আলী ইমাম, জাফর ইকবাল, কায়কোবাদ স্যারদের থেকে শুরু করে হাল আমলের চমক ভাইয়ারা এখনো এইসব বিষয়ে মৌলিক ও অনূদিত বই প্রকাশ করে চমক দেখিয়েই চলেছেন। কিন্তু যেগুলো মানবাত্মার খোরাক—চিত্রকলা, সাহিত্য, সংগীত কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের আর অন্য শাখা—ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি সেইসব বিষয়ে কি লিখিত হয়েছে কোনো বই? সোজাসুজি উত্তর—না। হলেও তা টেক্সটবুক, যা একঘেয়ে এবার সর্বসাধারণের উপযোগী নয়। ফলে, এইসব বিষয়ে প্রাথমিক ধারণার জন্য যুগ যুগ ধরে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের কাছেই হাত পাততে হয়েছে আমাদের। মনে হয় এই অভাববোধ থেকেই পিনাকী ভট্টাচার্য এগিয়ে এসেছেন। ভারতীয় দর্শন, বাংলার ইতিহাস, পশ্চিমা চিত্রকলার উপর বই লিখে তিনি চমকে দিচ্ছেন আমাদের। তাঁর এই বইগুলো— 'মন ভ্রমরের কাজল পাখায়', 'সোনার বাংলার রূপালী ইতিহাস', 'ভারতীয় দর্শনের মজার পাঠ' সর্বস্তরের উপযোগী করে লেখা। সহজ-সাবলীল ভাষা এবং যতিচিহ্নের মারপ্যাঁচমুক্ত স্পষ্ট বাক্য। ফলে, একেবারে তরলও নয় আবার কাষ্ঠকঠিনও নয়। বারো বছরের কিশোর থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধ—আগ্রহী সকল পাঠকের চাহিদা মেটায় এই ধারার বইগুলো। আর তাঁর ভাষায় 'এক বসাতেই' সত্যি সত্যিই পড়ে ফেলা যায় বইগুলো। আমি চাই, তিনি এই ধারার আরো বই লিখুন। অন্য লেখকেরাও এগিয়ে আসুক এই ধরনের রচনায়। এখনো অনেক বিষয় যেমন— সঙ্গীত, অর্থনীতি, রাজনীতির মতো অনেক শাখাতে আমাদের কোনো পরিচয়মূলক বই-ই নেই। এবং যেসব বিষয়ে আছে তা-ও খুব সীমিত —হাতেগোনা দুই-একটা। কামনা করি, মানবিক/কলা এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বই রচনার রেনেসাঁ ঘটে যাক বাংলাদেশে।
Read More
Was this review helpful to you?
By Sakib,
18 Nov 2020
Verified Purchase
আর্ট এবং আর্টিস্টদের ব্যাপারে শুন্য জ্ঞান থাকলে... বইটি একটি অনন্য সুযোগ ইতিহাসের নতুন দুয়ার খোলার, তাকে নানা ভাবে জানার