গানের শিল্পীরা অনেকেই কম বেশি গাইতে পারেন। তবে আদ্যোন্ত একজন গানের মানুষ হয়ে ওঠাটা একটু কষ্ট ও শ্রমসাধ্যই বটে। এই দুঃসাধ্য কাজটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সফলভাবে করতে পেরেছেন যে কয়জন মানুষ তাদের মধ্যে শান্তনু। বিশ্বাস একজন। গান ভালবেসে অন্তরের তাগিদেই গানকে অঙ্গাঙ্গী সযত্নে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজের যাপিত জীবনের সাথে। ছােটবেলা থেকে মনের আনন্দে গান গেয়ে বেড়ে ওঠা এই শিল্পী ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী হিসেবে কণ্ঠে গান নিয়ে যুদ্ধে শামিল হয়েছেন। আজ তিনি যেখানে এসে পৌঁছেছেন সেখানে। পৌছানাের লড়াই তিনি একাই লড়ে গেছেন। তাঁর গানের ব্যতিক্রমী কথা অন্য ধারার সুর আর অনন্য বৈশিষ্ট্যের গায়কির কল্যাণে গানগুলাে মনে গেঁথে থাকে। যারা নিজে গান লিখেন, সুর করেন এবং নিজের কণ্ঠ সুধায় সেই গানগুলাে দিয়ে শ্রোতাকে মুগ্ধ করতে পারেন শান্তনু বিশ্বাস তাদের একজন। শুধু নিজের লেখা ও সুর করা গান কণ্ঠে নিয়ে মঞ্চে ওঠার সাহাস তিনি দেখাতে পারেন অনায়াসে। মঞ্চ অথবা টিভি চ্যানেলে শুধু নিজের গানের মন্ত্রজালে ঘন্টার পর ঘণ্টা শ্রোতাদেরকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারার এক অসাধারণ ক্ষমতা তার রয়েছে। আমরা তাঁর অনুরাগীরা সহজেই বুঝে যাই কোথায় তিনি অন্যদের চেয়ে একটু হলেও ব্যতিক্রম। কী গভীর মমতায় তিনি তাঁর গানে মানুষের কথা বলেন, জীবনের কথা বলেন, জানিয়ে দেন স্বপ্নের কথা ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের টুকরােগুলােকে জোড়া লাগিয়ে আবার নতুন স্বপ্ন দেখার সাহসও পাই আমরা তাঁর গানে। শান্তনু বিশ্বাসের গানের কথাগুলাে সেই গভীরতায় জন্ম নেয় বলেই তাঁর গান শুধু শ্রোতার আবেগকে স্পর্শ করে তা নয় একই সঙ্গে সেই গান আমাদের চেতনাবােধকে জাগ্রত করে এবং সম্প্রসারিত করে। তাঁর গানের বাণী ঋজু, হৃদয়স্পর্শী ও মনন আশ্রয়ী। সকলের হৃদয়ে হৃদয়ে যেকথা গুঞ্জন করে, তিনি সেকথাই গানের মাধ্যমে সহজে প্রকাশ করতে পারেন। সেদিক দিয়ে ভাবলে তিনি আমাদের কালের সার্থক প্রতিনিধি।