"অলখ যোদ্ধা" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া দীর্ঘ নয় মাসের স্বাধীনতার সংগ্রাম। লাখাে শহীদের আত্মত্যাগ আর বােনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা। এক মহান নেতার আহবানে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তি সংগ্রামে। প্রত্যেকে নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়েছে। কেউ করেছে সম্মুখযুদ্ধ। কেউ মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, তথ্য পরামর্শ দিয়ে পরােক্ষভাবে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে। থেমে ছিলাে না স্বাধীনতা বিরােধী রাজাকার বাহিনী আর তাদের সঙ্গীরা। মিলিটারিদের কুপরামর্শ দিয়ে, তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছিলাে তারাই। একাত্তরের নয়মাস বাঙালির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। এ সময়ে ঘটে গেছে জানা অজানা বহু ঘটনা। একজন মাস্টারের মুক্তিযুদ্ধে পরােক্ষ অংশগ্রহণকে নিয়েই এগিয়েছে বইয়ের প্রতিটি ধাপ। তিনি যেমন ছিলেন ধর্মভীরু, তেমনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতাকামী একজন সরল মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছেড়ে দেয়া, রাজাকারদের কাছে মাথা নত না করা, হানাদার বাহিনীর উদ্যোগে পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতার কৌশলে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত করা, দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের সামর্থমতাে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার গল্পই তুলে ধরা হয়েছে। যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা চেয়েছিলাে, মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করেছিলাে, পরবর্তীতে তারাই কিভাবে ভােল পাল্টে মুক্তিকামী সেজে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিশে যায়- তাও ফুটে উঠেছে বইটিতে। শুধু সশস্ত্র সংগ্রামই নয়, পরােক্ষভাবেও কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অনেকে অবদান রেখেছিলাে তা বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষ কোটি মুক্তিকামী মানুষের প্রত্যক্ষ পরােক্ষ অবদানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমরা যারা পরবর্তি প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারিনি, তাদের মনে অব্যক্ত কষ্ট থেকেই যায়। দেশের জন্য নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে, দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে অবদান রাখতে পারার মাঝেই নিজেদের স্বার্থকতা মনে করি। -লেখক