"জীবন ও কর্ম : উসমান ইবনে আফফান রা. (প্রথম খণ্ড)" বইয়ের পিছনের কভারের কথা: আজকের সমস্যা-সঙ্কুল পৃথিবীতে, যেখানে ভেতর এবং বাহির থেকে ইসলামের উপর নানাবিধ আক্রমণ করা হচ্ছে, মুসলমানগণ সত্যিকার অর্থেই একজন দৃঢ় ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে। তবে সবসময়েই এ অবস্থা ছিল, তা কিন্তু নয়। ইসলামী ইতিহাসে প্রথম শ্রেণির তালিকাভুক্ত নেতার সংখ্যা অনেক।
ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবীর জীবন ও কর্ম : উসমান ইবনে আফফান রা. কিতাবে একজন অনুসরণীয় নেতার চরিত্র বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রশংসনীয় গুণাবলীও। খুলাফায়ে রাশেদীনের তৃতীয় খলীফা উসমান ইবনে আফফান রা. কীভাবে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন, কুরআনের একক প্রতিলিপি তৈরি করেছিলেন এবং পরিশেষে এক জটিল পরিস্থিতিতে উদ্ভূত ফিতনাকে কীভাবে মোকাবেলা করেছিলেন—তা খুবই হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন করেছেন।
এতদসঙ্গে যুন্নুরাইন (উসমান রা., দুই নূরের অধিকারী)-এর খলীফা-পূর্ব জীবনের উপরও লেখক সারগর্ভ আলোচনা করেছেন। তার এই বর্ণনা এতই সাবলীল যে, রাসূল সা.-এর প্রতি তার একনিষ্ঠতা, কুরআনের সাথে তার গভীর সম্পর্ক এবং ইসলামী রাজ্যগঠনে তার উদাত্ত দানশীলতা সহজেই পাঠকের দৃষ্টিতে এক অনাবিস্কৃত সম্পদ বলে মনে হবে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০