"জিভ কাটলো নতুন বউ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ প্রিয় সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের নামে নাতির নাম রেখেছিলেন শহরের প্রখ্যাত ভজন ডাক্তারের শশুরমশাই। ছেলেকে ডাক্তারিশাস্ত্র পড়াতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু ছােটবেলা থেকেই সাহিত্যপাঠের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল শরতের। এজন্য অবশ্য পাঠশিক্ষায় ভাটা পরেনি। লেখাপড়ায় যে সে বেশ ভাল ছিল সেটা তার পরীক্ষার রেজাল্টেই প্রমাণ মিলত। নম্র ভদ্র শরতের সাথে থানার গারদে হঠাৎ পরিচয় ঘটে শিবপদের। সেই অদ্ভুদ চরিত্রের শিবপদের জন্ম হয়েছিল শহরস্ত পতিতাপল্লিতে। নিবাসও সেখানে; যে আবার অন্যের হয়ে জেল খাটে টাকার বিনিময়ে। শরৎচন্দ্র তার নাবালক স্ত্রীকে ফেলে ফুলশয্যার রাতে গিয়ে ওঠে পতিতালয়ে সেই শিবপদের ঘরে। সেখানেই তার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে অনন্যা এক নারী সীতাঁর সাথে। সীতা লক্ষ্য করে শরতের একটি দাঁত সােনা দিয়ে বাঁধানাে। ক্লাশ সেভেনে থাকতে খেলতে গিয়ে আসল দাঁতটি খােয়া যায়। বিপ্লব শরতের স্কুল ফ্রেন্ড। পড়ালেখার পাট চুকিয়ে যে এখন শহরের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। পূর্ব পরিচিত বিপ্লবই শরতকে নিয়ে চলে এক অন্ধকার অচেনা জগতে। সেই জগতে-নিয়তি তাকে নিমজ্জিত করে আরও অতল অন্ধকারে মৃত্যু মুখে। মর্গে তাকে কেউ শনাক্ত করতে পারে না। পরিবারের লােকজনও তাকে শনাক্ত করতে পারে না বা করে না। শহরের সবাই শুধু জানে শরৎচন্দ্র নিখোঁজ। পতিতাপল্লির সেই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী সীতার শুধু মনে হতে লাগে এটা হয়ত শরতেরই লাশ হবে। মর্গে গিয়ে সে দেখতে পায় অসম্ভব রকম ফুলে ওঠা আর পচন ধরা লাশটির মুখ হা করা এবং সােনা দিয়ে বাঁধানাে দাঁতটি নেই। বেওয়ারিশ হিসেবে যখন লাশটি সৎকার করার সিদ্ধান্ত নেয় থানা কর্তৃপক্ষ ঠিক তখনই সীতা সিদ্ধান্ত নেয় লাশটির মুখাগ্নি করবে সে এবং শেষপর্যন্ত তা করেও। সীতার মনের গহীনে সুপ্ত যে ভালােবাসা বিরজিত ছিল শরতের জন্য তা যেন ব্যক্ত হয়ে উঠল শরতের মুখাগ্নির মধ্য দিয়ে। স্বল্পায়তনের এই উপন্যাসটি অদ্ভুত এক প্লেটোনিক প্রেমের ট্র্যাজেটিক কাহিনি।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।