নিরুদ্দেশের ফেরা বই থেকে: অনেকদিন বাদে এতাে সকালে বেরুলাম। ট্রেন ধরবাে বলে। খুব সকালে ফাঁকা রাস্তায় জোরসে রিকশা ছাড়লে আমার বরাবরই কেমন শীত শীত লাগে। এমনকি বােশেখ মাসের সকালেও। এ সময় বেশ আয়েশ করে একটা বিড়ি ধরাবার নিয়ম লেখা আছে শাস্ত্রে। আমি তার বিরােধিতা করি কীভাবে। বিড়ি ধরিয়ে হাত ঘড়িটার দিকে তাকাতেই বুকটা ছৎ করে উঠলাে। আর মােটে আট মিনিট। আমার বাসা থেকে এয়ারপোের্ট স্টেশন রিকশায় কমপক্ষে ২০ মিনিট। সঠিক সময়ে মক্কাবাসীর পবিত্র হজ পালনের রেকর্ড যেমন খুব খারাপ ঠিক তেমনি ট্রেনে চড়বার বিষয়েও আমার সমপর্যায়ের রেকর্ড। তিনদিন আগে ট্রেনের টিকিট কেটে সেই ট্রেন মিস। করে, অন্য ট্রেনে বাদুড় ঝােলা হয়ে ভ্রমণের সুখ্যাতি আমার আগেও আছে। আজকেও আরেকটু হলেই গেসিলুম। কিন্তু স্রষ্টা মুখ তুলে চাইলেন। ট্রেন এবং আমি ঠিক একই সময়ে প্ল্যাটফর্মে ঢুকলাম। সে এক রাজকীয় অনুভূতি। আপনারা ঠিক বুঝবেন না, তবুও বলি। বড়লােকেরা যখন অফিস বা হােটেলের গেটে এসে দাঁড়ান, ঠিক তখনই তাদের ঝা চকচকে গাড়িটা এসে সামনে দাঁড়ালে তাদের যেমন এক ধরনের গব্ব গব্ব টাইপের মুখ হয়, আমারও তেমনি হলাে। না তার চেয়েও বেশি হলাে। কারণ নিশ্চয়ই গাড়ির চেয়ে আস্ত একটা ট্রেন অনেক বড়াে। তাই গব্বের পরিমাণটাও।। ট্রেন এসেছে কমলাপুর থেকে। দুই সঙ্গী ওখান থেকে চড়েছে। তারা ফোনে জানিয়েছে টিকিট সমেত সিট রেখেছে ট্রেনে। তবে এ তথ্য আমার কাছে সরাসরি আসে নি। এয়ারপোের্ট স্টেশনে আমার প্রতীক্ষায় যে সঙ্গী দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি আমাকে ফোনে জানিয়েছিলেন। ভিড় ঠেলেঠুলে ট্রেনের কামরায় ঢুকতেই টের পেলাম তথ্যে সামান্য গণ্ডগােল হয়েছে। আসলে সিট, ওরা দুজন সােজা হয়ে দাঁড়ানাের মতাে একটু জায়গা আমাদের জন্যে দখলে রেখেছে। পুরাে ট্রেনে মানুষের পা বাঁচিয়ে সুই ফেলবারও জায়গা নেই। সে তুলনায় আমার মতাে হুমদো সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে ব্যাপারটা….