"চীন: গ্লোবাল অর্থনীতির নতুন নেতা" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: রাষ্ট্রের প্রধান শত্রু ছিল আমেরিকা রাষ্ট্র। প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে যেমন ভিন রাষ্ট্রের শত্রুতা থাকে। এটা কী তাই? আমরা ক্যাপিটালিজমের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক কী, সেটা ঠিকঠাক বুঝাবুঝির চেয়ে দুই রাষ্ট্র মাত্রই তাদের যে শত্রুতা থাকে, আমেরিকাকে আমাদের শত্রু বিবেচনাবােধ সেদিক থেকে নয় তাে? এটা যাচাইয়ের দরকার আছে। দুনিয়াতে ক্যাপিটালিজমের বয়স পাঁচশ বছরের মত। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা আরও সুনির্দিষ্ট করে এর সমাপ্তি ১৯৪৫ সালকে একটা পথচিহ্ন বা মাইলস্টোন মার্ক বলা যায়। সেটা এই অর্থে যে, এর আগে আর পরে আমরা ক্যাপিটালিজমের দুইটা রিমার্কেল আলাদা রূপ চিহ্নিত করতে পারি। আর এর নামকরণ করা যায় এভাবে, - প্রথম পর্বের নাম যদি কলােনিক্যাপিটালিজম’ বলি, তবে পরের পর্বের নাম হবে প্রাতিষ্ঠানিক গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম'। মানে পরের পর্বে আমেরিকার নেতৃত্বে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, রাষ্ট্রসংঘ, গ্যাট ইত্যাদিতে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্যাপিটালিজম পরিচালনা। দুনিয়া চলবার, চালাবার একটা অর্ডার বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করে নেয়া। অর্থাৎ এই প্রথম বহুরাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিকতায় (multilateral institutional) আমরাক্যাপিটালিজমকে দেখি। এতদূর বলার পর, এবার এই সুযােগে একই নিশ্বাসে বলে ফেলার সুযােগ নিয়ে বলি, গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের তৃতীয় পর্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। তবে এবার চীনের নেতৃত্বে তা আসন্ন হয়ে উঠেছে। এই বইটা আসন্ন সে বিপুল ঘটনার সাথে সাধারণ পাঠকের পরিচয় করাবার প্রাথমিক এক পদক্ষেপ। ক্যাপিটালিজম এই ফেনােমেনার ভিতরেই এর দুনিয়া জুড়ে এক ফেনােমেনা হয়ে উঠার লক্ষণ একেবারে শুরু থেকেই। আর ক্রমশ সে তাই হয়ে উঠেছে। এই বইয়ে সব সময় ‘গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম' কথাটা ব্যবহার করা হয়েছে। আবার যদিও ‘গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম' বলা হয়েছে বেশির ভাগ সময়, কিন্তু আসলে বলতে চাওয়া হয়েছে অথবা বলা যায় এই বইয়ের প্রসঙ্গ হল ‘গ্লোবাল ইকনমি'। মানে ক্যাপিটালিজমে পরিচালিত গ্লোবাল ইকনমি। এই সূত্রে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম' শব্দের ব্যবহার হয়েছে। ব্যবহারিকভাবে বা প্রাকটিস অর্থেবললে দেখা যায়, মালিকানার দিক দিয়ে ক্যাপিটালিজমকে বুঝাবুঝির চেষ্টা এটাই মূল ধারা। এখানে বিনিময় বা এক্সচেঞ্জ এর দিক থেকে বা বিনিময় সম্পর্কে সমাজের দিক থেকে ক্যাপিটালিজমকে বুঝা আর কথাগুলাে বলার চেষ্টা - এটাই প্রবল। এই বইয়ের মূল প্রসঙ্গ আবার ঠিক ক্যাপিটালিজম নয়। বরং গ্লোবাল ইকনমিক অর্ডারে নেতৃত্বে বদল ও এর প্রতিক্রিয়া।
গৌতম দাস-এর জন্ম, ১৯৬২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী, দিনাজপুরে। বুয়েটের ছাত্র থাকা অবস্থায়, এরশাদ বিরােধী তিরাশির ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বুয়েটের লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই রাজনীতির সূত্রে লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে বুয়েট থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৯০ সালের পরে অবশ্য আবার বুয়েটে ফিরে গিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। দেশে চাকরি করেছেন। এরপর জাতিসংঘ মিশনের চাকরি সূত্রে এবং পারিবারিক কারণে দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত আফ্রিকার নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ফিরে দেখা ও রিভিউ, আর রাষ্ট্রবিষয়ক তত্ত্ব ও ধারণা তাঁর প্রিয় বিষয়। ওদিকে গ্লোবাল রাজনীতির বাঁক বদল, সেই সাথে আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতির অন্দরের নড়াচড়া আর তার বিশ্লেষণ -এগুলােও তাঁর লেখার প্রিয় বিষয়। এছাড়া, দৈনিক নয়া দিগন্তে তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক কলাম লিখে থাকেন।