“নতুন নেপাল" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আমাদের ঘরের কাছেই নেপালে এক দারুণ রাজনৈতিক সংগ্রামের বিজয় হয়েছে এবং রাজতন্ত্র থেকে নতুন রিপাবলিক গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কনষ্টিটিউশন গৃহিত হবার ঘােষণা অর্থাৎ রাষ্ট্রগঠন সম্পন্ন হয়ে গেছে। এই পুরাে লড়াই আর পুনর্গঠনের কাজটা হয়েছে মূলত কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে। আর এই কমিউনিস্ট পার্টিও খুব নবীন। ১৯৯৪ সালে গঠিত হয় পুষ্পকমল দাহালের নেতৃত্বে এই দল। এই সমগ্র ঘটনা অভাবনীয় এবং তার তাতপর্য অপরিসীম। আমাদের মত দেশে যেখানে বিপ্লব বেহাত হয়ে যায়, রাজনৈতিক লড়াইয়ের পরে পুনর্গঠনের কাজটা কখনাে করতে পারি সেখানে নেপালের রাজনৈতিক ঘটনাবলী একটা দারুণ শিক্ষা হয়ে থাকতে পারে। নেপালের রাজনীতি সম্পর্কে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, তা হচ্ছে ভারতের সাথে সম্পর্ক। ভারত নেপালের ল্যান্ড লকড ভৌগলিক অবস্থার সুযােগ নিয়ে একটা উপনিবেশিক ধরণের অধীনতা মুলক সম্পর্ক রেখে চলেছে। একদিকে রাজতন্ত্র আরেকদিকে ভারতের খবরদারী দুটোই অস্বীকার ও পরাজিত করার মধ্যে দিয়ে মূলত কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে একটা আধুনিক রিপাবলিক গড়ার যে লড়াই তা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে। আবার এই কমিউনিস্টরা আমাদের দেশের মতাে সুশীল নয়, তাঁরা রীতিমতাে সশস্ত্র লড়াই করেছে। শুধু সশস্ত্র লড়াই নয় নানা সময়ে সে শান্তিপুর্ন লড়াই ও করেছে। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট জামানার সমাপ্তি হয়েছে যেই সময়ে তখন আবার সশস্ত্র কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক বিজয় কীভাবে হল তা পর্যালােচনা করে শিক্ষা নেবার প্রয়ােজন আছে।
গৌতম দাস-এর জন্ম, ১৯৬২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী, দিনাজপুরে। বুয়েটের ছাত্র থাকা অবস্থায়, এরশাদ বিরােধী তিরাশির ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বুয়েটের লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই রাজনীতির সূত্রে লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে বুয়েট থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৯০ সালের পরে অবশ্য আবার বুয়েটে ফিরে গিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। দেশে চাকরি করেছেন। এরপর জাতিসংঘ মিশনের চাকরি সূত্রে এবং পারিবারিক কারণে দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত আফ্রিকার নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ফিরে দেখা ও রিভিউ, আর রাষ্ট্রবিষয়ক তত্ত্ব ও ধারণা তাঁর প্রিয় বিষয়। ওদিকে গ্লোবাল রাজনীতির বাঁক বদল, সেই সাথে আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতির অন্দরের নড়াচড়া আর তার বিশ্লেষণ -এগুলােও তাঁর লেখার প্রিয় বিষয়। এছাড়া, দৈনিক নয়া দিগন্তে তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক কলাম লিখে থাকেন।