মো. মাঈন উদ্দিনের গল্পের বই ‘শুভ্র ভালোবাসা’। বইটিতে ষোলটি গল্প সূচিবদ্ধ করা হয়েছে। ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ শাখা। ফলে গল্পকারদের দায়িত্ব অনেক বেশি থাকে। গল্পের শিল্পমান ও গল্পের নতুনত্বের ব্যাপারে সব সময়ই সচেতন থাকতে হয়। গল্পের ভাষাভঙ্গি ও ঘটনার বর্ণনার কৌশল গল্পকারকে করে তোলে অনন্য। ভালোবাসার রঙ কি? অনেক রকম ভালোবাসা থাকে, থাকে অনেক রঙ। ‘শুভ ভালোবাসা’ বইটিতে ভালোবাসার গল্পগুলো প্রধান হয়ে উঠেছে। মানুষের গল্প পাই এ বইটিতে। মানুষের যে বহুমুখি চরিত্র তার প্রকাশ আছে এ বইটিতে। বইয়ের প্রথম গল্প সত্তা। সত্তা একটি নারীর গল্প। যার স্বামী একজন জঙ্গি ছিল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মারা পড়ে। অসহায় এ নারীর আশ্রয় মেলে রায়হান চৌধুরীর ব্যবসাকেন্দ্রে। টাকা আর নানা প্রলোভন দিয়ে ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে যে নারী লোলুপ। নারীভোগের নেশায় মত্ত হয়ে একটি সন্তান সম্ভবা নারীকেও মুক্তি দেয় না তার কামনার রোষানোল থেকে। প্রতিবাদী নারীর হাতে বদ হয় এই অসুর রায়হান। ‘রতœাবতী’ এর বিপরীত একটি গল্প। সামান্য একটি জেলের মেয়ের অদম্য মেধার বিকাশে সহায়তা করে এক শিক্ষা কর্মকর্তা। ধীরে ধীরে মেয়েটি তার মেধার স্বাক্ষর রাখে। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে ওর চাকরি হয়। এরপর দুজন পারিবারিক, সামজিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ‘শুভ্র ভালোবাসা’ গল্পে পাই মিলনহীন এক প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। যারা আলাদা হয়েও ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে বাঁচার স্বপ্ন বোনে। নানা রকম সামাজিক, পারিবারিক ঘটনাকে গল্প করেছেন মাঈন। চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই আমাদের আড়ালে থেকে যায় কিন্তু এসবের মধ্যেও যে কতো দুঃখ শোকের দহন থাকে তা আমরা খোঁজ রাখি না। এইসব নিখোঁজ জীবনের মৌলক, যৌগিক রসায়ন এ গল্পগুলো।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালে জন্মগ্রহণ করেন মো. মাঈন উদ্দিন। স্নাতক পরীক্ষার পরপর-ই জীবন ও জীবিকার সন্ধানে চলে যান ঢাকা শহরে; শুরু করেন কর্মজীবন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি টঙ্গীস্থ মধুমিতা রোডে অবস্থিত রাইজিং সান একাডেমিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি উত্তরা ছয় নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসা’য় কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর চলে যান সাভার ক্যান্টঃ পাবলিক স্কুল ও কলেজে। সেখানে বছর দু-এক কর্মরত ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স করা এ লেখক বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। জাতীয় পত্রিকায় তাঁর লেখালেখির সূচনা হয় রম্যগল্প দিয়ে। বর্তমানে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় লিখছেন রম্যগল্প, শিশু-কিশোর গল্প, রোমান্টিক ছোটগল্প। এছাড়াও লিখছেন দেশ-বিদেশ সম্পর্কিত নানাবিধ কলাম। লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ- ‘ফেঁসে গেলেন গেদু চাচা’, রম্য গল্পগ্রন্থ-২০১৭। ‘শুভ্র ভালোবাসা’, রোমান্টিক গল্পগ্রন্থ-২০১৮। ‘খুকি ও টিয়া পাখি’, শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ-২০১৮। ‘শিয়াল পণ্ডিতের লোকসান’, শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ-২০২০। ‘কাক ছানার অভিমান’, শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ-২০২০।