‘মনটা আমার উড়ালপাখি/এই থামে ফের ওড়ে/দুষ্টু পাখার ঝাপটানি খুব/স্বপ্নরেণু ছোড়ে/এই চলে যায় সবুজ নীড়ে, মাঠে/কিংবা নদীর ঘাটে/দূর পাহাড়ে মেঘের দেশে মন/নীল আকাশে উদাস উদাস/তার যে বিচরণ।’ মনের কি কোনো রূপ আছে? মন কি ধরা যায়? মনের রঙ কি? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেলেও মনকে তো একটা কিছু দিয়ে প্রকাশ করতে হবে? ছড়াকার ওসমান মাহমুদ মনকে ছড়ায় ছড়ায় আবিষ্কার করেছেন উড়ালপাখি হিসেবে। তিনি এই মনকে নিয়েই লিখলেন বইটি। ‘মনটা আমার উড়াল পাখি’ বইটি একটি দীর্ঘ ছড়ার বই। একটি ছড়াতেই তিনি নানা বিষয় ও উপকরণ যুক্ত করেছেন। মন যে উড়ে উড়ে কখন কোথায় যায় তার ঠিক ঠিকানা নেই। ‘মন হয়ে যায় আগলছেঁড়া/কালবোশেখি ঝড়/দাবড়ে বেড়ায় থুত্থুরে বট/মাঠ নদীকূল চর।/ঈশান কোণে পুঞ্জ কালো মেঘ/যমরূপে যে ধ্বংসরীলায়/বাড়ায় ক্ষোভের বেগ।’ পাখির মতো উড়ে বেড়ানো মন কতো কী যে চায়। বিশেষ করে কিশোর মনের যে দুরুদুরু কাঁপন ও সিগ্ধতা, কৌতূহল ও কল্পনা তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। মন মেঘ হতে চায়, পালতোলা নাও হতে চায়, ফড়িং হতে চায়, কোকিল হতে চায়- ‘মনপাখি চায় কোকিল হবে/গাইতে কুহু গান/ফাগুন-বনে ফুলের কানে/পাঠায় মধুর তান।/কৃষ্ণচূড়া পলাশফোটা বনে/মন মিশে যায় নিসর্গের এই/দারুণ আয়োজনে।’ কিশোর মনের নানা ইচ্ছে ও কল্পনার সারৎসার এই ছড়ার বইটি। মনের মর্মমূলে অঙ্কুরিত নানা স্বপ্নের শাখা-প্রশাখা এই বইটি। প্রকৃতির সাথে যে মানুষের নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তাকে আরো বেশি সুললিত করে ছন্দে ছন্দে গেঁথে দিয়েছেন ওসমান মাহমুদ। আট পৃষ্ঠার রঙিন প্রচ্ছদ ও নান্দনিক অলংকরণে ক্রাউন সাইজের এ বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করা গেলেও এর যে ছন্দ ও চিত্রকল্পের ঝংকার তা পাঠকমনে স্থায়ী হবে সেটা শপথ করেই বলা যায়।
ওসমান মাহমুদ। কবি ও ছড়াকার। জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে নোয়াখালীর সেনবাগ থানার এনায়েতপুর গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও মাতা মানকিরেন নিসা। প্রকাশিত গ্রন্থ : স্নেহের গিলাফ, খুনঝরা ফাল্গুন, মন ছুটে যায় জারুলবনে, মনটা আমার উড়ালপাখি।