আতিউর রহমান কৃতবিদ্য ব্যক্তি, একইসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও সমাজ-ইতিহাসের বিশ্লেষক। প্রসারিত দৃষ্টিতে তিনি বিচারে সক্ষম বাংলাদেশের সামাজিক রূপান্তর এবং বাঙালিত্বের চেতনায় জাতির জাগরণ। এই দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধের অনন্য তাৎপর্য এবং বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার বিশিষ্ট ব্যাখ্যাকারের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে তাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখি ও বিশ্লেষণে তাঁর অবদানের পরিচয় বহন করে ইতিপূর্বে প্রকাশিত তিন গ্রন্থ : অসহযােগের দিনগুলি, মুক্তিযুদ্ধের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ। মহত্তম এই সংগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের যে নিবিড় অংশগ্রহণ, এর আর্থ-সামাজিক দিক, সাধারণ্যে সৃষ্ট আলােড়ন এবং মুক্তির স্বপ্ন ঘিরে গােটা জাতির আকুতির তথ্যমূলক, ব্যতিক্রমী, গবেষণালব্ধ পর্যালােচনার পরিচয় বহন করে গ্রন্থত্রয়ী বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হলেও মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের ভূমিকা তিন গ্রন্থেরই হয়েছে অভিন্ন উপজীব্য। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণামূলক বিশ্লেষণী গ্রন্থ যখন বিশেষ প্রকাশিত হয়নি, সেই সময়ে এই গ্রন্থয়ী ইতিহাস বিচারে যােগ করেছিল গভীরতর মাত্রা। গ্রন্থসমূহের বর্তমান। অখণ্ড সংস্করণ পাঠকের জন্য হয়ে উঠবে বিশেষ তাৎপর্যময়, এটা সঙ্গত আশাবাদ। কেননা পৃথকভাবে প্রণীত হলেও গ্রন্থয়ীর মধ্যকার অভিন্নতা, পরম্পরা ও যােগসূত্র নতুন আলােকে চিনতে সহায়তা করবে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, বহু মানুষের অবদানে যা হয়ে উঠেছিল সার্থক সেই উনিশ শ একাত্তর সালে।
Atiur Rahman- রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন : আর্থ-সামাজিক পটভূমি’; মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই :‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ’; ‘অসহযোগের দিনগুলি’,রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা;’ ‘উন্নয়ন আলাপ;’ ‘জনগণের বাজেট;’ ‘আলো আঁধারের বাংলাদেশ;’ ‘সুশাসনের সন্ধানে;’ ‘ অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন;’ ‘উন্নয়ন কার জন্য;’ ‘অপউন্নয়ন;’ ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা;’ `Peasants and classes;’ `Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।