বড় ক্লান্ত পায়ে বট গাছটার শেকড়ে একটু ঠেস দিয়ে দাঁড়ালাম। সামনে এগুবার এক পাও সুযোগ নেই। ঢালটা খাড়া হয়ে নেমে গেছে নিচে। পা হড়কে গেলেই ডিগবাজি দিয়ে ঝোপঝাড়ে লটোপুটি খেয়ে একদমেই কিনারায় পৌছে যাব। তবু ছোঁবার যো নেই এক ফোঁটা জল। এ এখন আর নদী নয়, শহরের নর্দমার প্রধানতম নালা হয়ে পড়েছে। একে নদী বলতো, না নদ? খেয়াল করতে পারছি না। কোনো কেতাবে এর জীবনবৃত্তান্ত পাব কি না... হয়তো পেতে পারি। কিন্ত এ ঘুটঘুটে রাতে কেতাবের ঘরে, এ মধ্যরাতে, আমার জীবনের মহাবিপর্যয়ের এ মুহুর্তে হবে না। আমার হয়ত কাল আর সূর্যোদয় দেখা হবে না। গারদের সিক ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকব। থালা বাটি কম্বল এই মোর সম্বল বাইরের আলো চোখে পড়ে না মা... না হয়, নিভে যাবে আলো; জীবনের আলো। কিন্তু এ হওয়া প্রায় অসম্ভব। জীবনের আলো ফুঁ দিয়ে প্রদীপ নেভানোর মত করে স্বেচ্ছায় নিভিয়ে দেয়া আমার এ পঞ্চাশ, প্রায় পঞ্চাশ বছরের জীবনে ধারণারও বাইরে; নয় কি! আমার এ অতি প্রিয় নদীটা, ছোট; তবে এর চেয়েও ছোট, অর্ধেক দেহের নদী আছে - নারদ। সে আবার নদ। কিন্তু আমার এ কি নদী না নদ? এ কেমন সমস্যা হয়ে দাঁড়াল এখন! যাক, তবে এতো অজ- শিক্ষার দেশে কি করে এতো সব লাবণ্য জুটে ছিল বাংলায়, বড় ভাবায়- এ নদী না নদ!
এটিএম গােলাম মাহবুব চাঁপাই নবাবগঞ্জে জন্ম; বেড়ে ওঠা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯৩ সনে ফিন্যান্স-এ স্নাতকোত্তর । সে সময়ের প্রকাশ- কিশাের বয়সের বর্ষোপল’ আর ‘হৃদয়ের জল রং'। দীর্ঘ দেড় যুগ পরে ‘অন্তরগৃহ’ ‘নােনা। জলের কাব্য’ টুম্পার ট্রফি জয়।