১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল, দুপুরের দিকে মুক্তিযোদ্ধা শাকিল বিজয়ীর বেশে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করল। ঢাকার রাস্তাঘাট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী গণমানুষের আনন্দ-উল্লাসে মিলেমিশে একাকার। রাজপথ প্রকম্পিত করে তাদের মুখে মুহুর্মুহু স্লোগান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। আজ বিজয়ের দিন। বীর বাঙালি দখলদার পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধের ময়দানে পরাস্ত করে জয় ছিনিয়ে এনেছে। বিকালে রেসকোর্স ময়দানে যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়-পরাজয় সুনিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম শত্রুমুক্ত দেশ। তাই দেশজুড়ে আজ আনন্দের বন্যা বইছে। লাল সবুজের এই পতাকার জন্যে বাঙালি জাতিকে কি চরম মূল্যই না দিতে হয়েছে। লক্ষ শহীদের রক্ত এবং লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিচার নারকীয় গণহত্যা ও নারীর সম্ভ্রমহানির পৈশাচিক বর্বরতা সারা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করেছে। এ সব ভেবে শাকিল এক ধরনের ব্যথা অনুভব করে। তবে নিজকে মুহূর্তে সামলিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবে, আজ বিজয়ের দিন। সব কিছু ছাপিয়ে আজ আনন্দ করার দিন। মা-বাবা, ভাই-বোন ও সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর জন্য মনটা ছটফট করে উঠল। অনেকদিন কারও সঙ্গে যোগাযোগের ফুরসতও ছিল না। অক্টোবরের দিক থেকে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায়।
শামসুদ্দিন আহমেদের জন্ম বগুড়া শহরে। বগুড়া করােনেশন স্কুল হতে মাট্রিক এবং আজিজুল হক কলেজ হতে আইএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস পাস করে ১৯৬৯ সনে তদানীন্তন হেলথ সার্ভিসে যােগ দেন এবং সিলেট মেডিক্যাল কলেজে এনাটমির লেকচারার হিসেবে নিয়ােগ পান। ১৯৭০ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে মেডিক্যাল কোরে যােগদান করেন। পরে আইপিজিএমআর ঢাকা হতে পােস্ট গ্র্যাজুয়েশনের পর নাক, কান ও গলা রােগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন সামরিক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সরকারি চাকরি হতে অবসরের পর একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে কিছুদিন প্রিন্সিপ্যাল এবং ইএনটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁর রচিত উপন্যাস ‘অন্য রকম’ একুশে বইমেলা ২০১৪ তে প্রকাশিত হয়। বইটি পাঠক সমাজে যথেষ্ট সমাদৃত হয়। তাঁর ‘অবিভাজ্য উপন্যাস পাঠকদের মাঝে সাড়া ফেলবে, নিঃসন্দেহে বলা যায়।