"চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ কর্মময় জীবনের মধ্যে নিজ জাতির প্রাচীন ইতিহাস জানিতে চেষ্টা করিয়াছি। চাকমা জাতি সম্পর্কে এখনও বহু লােকের নানা অলীক ধারণা বর্তমান। বিভিন্ন পুস্তক ও পত্রিকায় চাকমাদের সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল তথ্য ও ভুল চিত্রাদির পরিবেশন দেখিয়া আমি ইতিহাসের মত জটিল বিষয়ে তথ্যাদি সংগ্রহে আত্মনিয়ােগ করিতে বাধ্য হই। ইতিহাস ও ভূগােলের মধ্যে একটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে চাকমাদের বেলায় ইহার ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে যেহেতু চাকমারা এই জেলার আদিবাসী নহে। এবং চতুর্দশ খৃষ্টাব্দেই তাহারা প্রথমে সুলতানের সুনজরে বাঙ্গালায় প্রবেশ করেন। কাজেই তাঁহাদের প্রাচীন ঘটনাগুলি ব্ৰহ্মদেশ ও আসামের সাথেই জড়িত। নবম শতাব্দী হইতে চাকমাদের ব্রহ্মদেশে ঐতিহাসিক প্রমাণে সাক্ষাৎ পাইলেও, ১৩৩৩ খৃষ্টাব্দ হইতে তাঁহাদের ইতিহাসের সূত্রগুলি ধারাবাহিকরূপে এবং সংক্ষিপ্ত আকারে তৎসমসাময়িক ইতিহাসের সাথে সংশ্লিষ্ট রাখিয়া রচনা করার প্রয়াস পাইয়াছি। ইহাতে ইতিহাসের মত জটিল বিষয়ে কতদূর সফলকাম হইয়াছি জানিনা। পুস্তকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে জাতীয় পরিচয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করিয়াছি। পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে সত্য সন্ধানের উদ্দেশ্য নিয়া বিভিন্ন গ্রন্থের গবেষণামূলক বিষয়গুলির আলােচনা করিয়াছি। ইহার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থকারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। নবম শতাব্দীর পূর্ববর্তী ইতিহাস আরাকান, ত্রিপুরা, আসাম, চম্পক নগর প্রভৃতি অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাদির কোন কোন স্থলে সংগতি রক্ষা সম্ভব হয় নাই। সুদীর্ঘ প্রাচীন ইতিহাসের বিক্ষিপ্ত ঘটনার সামঞ্জস্য রক্ষা করা দুরূহ। কালক্রমে আরও উপাদান সগ্রহে ইহার অধিকতর পূর্ণতা সম্ভব হইবে। এই পুস্তক পাঠে চাকমা জাতি সম্পর্কে কিছুটা পরিচয় লাভ করা সম্ভব হইবে, ইহাই আশা রহিল। -গ্রন্থকার