"মাকালাত-ই শামস-ই-তাবরিজি" বইটির 'প্রাসঙ্গিক কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ সুফি দর্শনের দুই কালজয়ী ব্যক্তিত্ব জালালুদ্দিন রুমি ও শামস-ই-তাবরিজির ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে বহু গল্প প্রচলিত রয়েছে। দুটি সত্তার জাগতিক সম্পর্ক এক পর্যায়ে জগতের জন্য এক পরম আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উৎসারণ ঘটায়। আটশ বছর ধরে সেই জ্ঞানের বিভায় আলােকিত হয়ে চলেছে পৃথিবীর প্রায় সব ভাষার সব জাতির সত্যসন্ধানী মানব-হৃদয়। রুমি-শামসের আলাপচারিতায় জীবন ও জগতের রহস্যময়তা ও পরমার্থ প্রকাশের ইঙ্গিত কালে-কালে ভাবুকদের আপুত ও আন্দোলিত করেছে। বাংলায় এই কথােপকথনের ভাবরস তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপনের সুযােগটিকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগিয়েছেন গ্রন্থকার সাব্বির হাসান নাসির। এ কাজের জন্য গদ্য কবিতার আঙ্গিক তিনি নির্বাচন করেছেন সত্যের শাস তুলে ধরার উপায় হিসেবে। এতে কোনাে সংশয় নেই যে, এই গ্রন্থ পাঠ করতে করতে পাঠক ভাবসমুদ্রে অবগাহনের সুখ, তৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করবেন। তাঁর সামনে খুলে যাবে সম্পূর্ণ অজানা একটি পথ হৃদয় শােনাবে : এই পথেরই তাে সন্ধান করে চলেছিলাম এতটা বছর! শামস-ই-তাবরিজির বয়ান, আলাপ ও দর্শন অনুধাবনের জন্য সততা, দার্শনিক মন জরুরি; প্রজ্ঞা আর মেধা পূর্বশর্ত। সেইসঙ্গে ওই পরম সত্যস্বর এবং গভীর জ্ঞান একটি ভাষার সীমানায় উত্তীর্ণ ও পরিকীর্ণ করবার জন্য কবির মননও অত্যাবশ্যক। রুমির মতাে বিশ্বজনীন কবিকে যিনি উদ্দীপিত ও প্রভাবিত করেছেন সেই সন্ত বা দরবেশ শামসের বাক্যের বাঁকে যে ইশারার ঝিলিক, যে দৃশ্য-সুষমাতা অক্ষরের কক্ষপথে প্রােথিত করার কাজটি যিনি করবেন তাকে কবি ও দার্শনিক হতেই হবে- এ ব্যাপারে কে করবেন দ্বিমত পােষণ! সুফি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এবং রুমির রচনায় ভক্তি সবার থাকে না। এ এক ভিন্ন আধ্যাত্মিক পথরেখা, যিনি সে রেখার বিদ্যুতে একবার ঝলসিত ঝলকিত হয়েছেন, কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ধারাবাহিক পদক্ষেপে সেই সত্যসুরায় সন্তরণ ও নিমজ্জন। অনুবাদককে তাই শুধু সাধুবাদ নয়, কৃতজ্ঞতা জানানাে সমীচীন।