শাহাবুদ্দিন আহমেদকে আমরা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী হিসেবে জানি। জানি তিনি একজন মুক্তিযােদ্ধা। কিন্তু ক’জন জানি তিনি একাত্তরের আগুনঝরা দিনগুলি কীভাবে কাটিয়েছিলেন! কীভাবে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন; শত্রুর মুখােমুখি হয়েছেন । একটা প্লাটুনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন; দেখেছেন সহযােদ্ধার আত্মাহুতি। বেঁচে থাকার আকুতিও দেখেছেন। তুলির পাশাপাশি এবার কলম তুলে নিয়ে লিখেছেন সেইসব অভিজ্ঞতার কথা। বইটির শুরু ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে আর শেষ ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর। আত্মসমর্পণ ও বাঙালির চুড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে এখানে উঠে এসেছে একাত্তরের মার্চে পুরাে দেশ, বিশেষত উত্তাল ঢাকার চিত্র, পঁচিশে মার্চের কালােরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা, বাঙালির প্রাথমিক প্রতিরােধ, শাহাবুদ্দিনের আগরতলায় গমন, কলকাতায় যাত্রা এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আবার ঢাকায় প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আগরতলার মেলাঘরে ট্রেনিং, ছবি আঁকা, চিত্রপ্রদর্শনী ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়ােজন, সালদা নদীতে সম্মুখযুদ্ধে প্রথম অপারেশনসহ একের এক অপারেশনে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকায় আগমন, সাভারে অপারেশন, ষােলই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের কিছু আগে শাহবাগস্থ রেডিও পাকিস্তান কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন—ঘটনাবহুল নানা দিনরাত্রি, অবর্ণনীয় কষ্ট আর। ‘জয়বাংলার স্বপ্নজড়ানাে জীবনের আখ্যান মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’-তে।
প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযােদ্ধা। প্যারিসপ্রবাসী এই শিল্পীর খ্যাতি সারা ইউরােপজুড়ে। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আলগী গ্রামে। জন্মস্থান ঢাকা। ১৯৫০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। তার জন্ম। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযােদ্ধা তায়েবউদ্দীন। আহমেদ তার বাবা। মা সাইফুন নেসা। স্বনামধন্য। কথাসাহিত্যিক ও শিল্পসমালােচক আনা ইসলাম তাঁর স্ত্রী।। দুই মেয়ে চিত্র ও চর্যা।। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বিএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই সময় তিনি। ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বৃত্তি লাভ করে ফ্রান্সের ইকোল দে বােজার্ট চারু ও কারুকলা। মহাবিদ্যালয়ে চারুকলা বিষয়ে পড়াশােনা করেন ১৯৭৪-১৯৮১ সাল পর্যন্ত। তখন থেকে প্যারিসেই বসবাস করছেন। শাহাবুদ্দিনের ছবির বৈশিষ্ট্য হলাে—গতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বারবার তার ক্যানভাসে ফিরে আসে। দেশবিদেশের অনেক গ্যালারিতে বহুবার তাঁর একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। গেরিলা বাহিনীর ১৭ নং প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন। সম্মুখযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৯২ সালে মাস্টার পেইন্টার্স অব কনটেম্পােরারি আর্টসের পঞ্চাশজনের একজন হিসেবে বার্সেলােনায় অলিম্পিয়াড অব আর্ট পদকে ভূষিত হন। ২০০০ সালে। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত। করে। এছাড়া ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন ২০১৪ সালে।।