"চাচনামাহ" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ঐতিহ্য ও ইতিহাসের শিকড়ের গভীরে উঁকি দিয়ে খৃস্টীয় অষ্টম শতকের গােড়ার দিকের সেই যুগের সাথে বর্তমান ও ভবিষ্যতের পাঠকের সেতুবন্ধনের প্রচেষ্টায় রচিত এই দুর্লভ সৃষ্টি। সিন্ধের রাজা চাচের নাম থেকেই চানামাহ্র নামকরণ হয়েছে। রাজপুত রাই রাজবংশের শেষ রাজা রাই সাহাসীর মৃত্যুর পর সুন্দরী ছলনাময়ী রানী সুহান্দীর সাথে প্রণয় ও পরিণয়ের মাধ্যমেই সিংহাসন আরােহণ করেন ব্রাহ্মণ সিলাইজ পুত্র চা। চাপুত্র দাহারের শাসনামলে সিন্ধের সমুদ্রবন্দর দেবলের কাছাকাছি জলদস্যুরা আটটি আরব জাহাজ লুণ্ঠন করে। শ্রীলংকায় অবস্থানরত কতিপয় আরব বণিকের মৃত্যু হলে সেখানকার রাজা সেই বণিকদের বিধবা স্ত্রী ও পরিজনদেরকে সেসব জাহাজে করে আরবে পাঠানাের ব্যবস্থা করেছিলেন। জাহাজগুলােতে হাজ্জায বিন ইউসুফ ও তকালীন খলিফা ওয়ালিদের জন্যেও মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী পাঠানাে হচ্ছিল। এই ঘটনার পর হাজ্জা সিন্ধের রাজা দাহারের কাছে বন্দী লােকজন ও লুণ্ঠিত ধনসম্পদ ফেরত দেবার দাবী জানান, কিন্তু জলদস্যুদের ওপর কোনােরকম কর্তৃত্ব নাই অজুহাতে দাহার সে দাবী প্রত্যাখ্যান করেন। এতে হাজ্জা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে দাহারকে উচিত শিক্ষা দেবার জন্য সিন্ধে প্রাথমিকভাবে দুটি অভিযান পাঠান। প্রতিকূলতার কারণে দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয়, তারপর হিজরী ৯২ সনে হাজ্জা তাঁরই ভ্রাতুস্পুত্র সতের বছরের তরুণ যুবা মুহম্মদ কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। প্রচুর পরিমাণে রসদ, অসংখ্য যােদ্ধা, যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং দুর্গ ধ্বংসকারী ‘আরুশাখ’ যন্ত্রের সহায়তায় দেবল বন্দর ও দেবল দুর্গ দখল করা হয়। দাহারের কুশাসনে অতিষ্ট স্থানীয় জাট ও মেদ গণ মুহম্মদ কাসিমের বাহিনীতে যােগ দিয়েছিলেন। তারপর নিরুনসহ অসংখ্য দুর্গ-শহর দখলে নেবার পর রাওয়ারে যুদ্ধ চলাকালীন অকস্মাৎ দাহার ধরাশায়ী হন এবং আরব সৈন্যরা তাকে বন্দী করে শিরচ্ছেদ করে। তারপর বিজয়ী বীর মুহম্মদ কাসিম ক্রমান্বয়ে ব্রাহ্মণাবাদ, আলর, মুলতান জয়ের মাধ্যমে সিন্ধে আরব শাসনের সূচনা করেন। অসম্ভব রণদক্ষতা ও অতুলনীয় বীরত্ব প্রদর্শনকারী এই বীরকে অবশেষে কেন তুচ্ছ মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল, ইতিহাস অধ্যয়ণকারীরা নিজেদের জন্য অবশ্যই প্রশ্নটির নিষ্পত্তি করতে সমর্থ হবেন।