"রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নামায" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: প্রিয় নবীজীকে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করলেও তাঁকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হিসেবে। তাঁকে দান করেছেন সর্বশেষ্ঠ আসমানী কিতাব, মহান আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী, মানবজাতির একমাত্র চিরন্তন, নির্ভুল সংবিধান পবিত্র কুরআনুল কারীম। যা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহপাক স্বয়ং নিজ দায়িত্বে নিয়েছেন। আর এ কুরআনুল কারীম হলাে প্রিয় নবীজীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা। আমি নামাযের ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিক কোন বই না পাওয়ায় যে ভাইয়েরা নিজেদের ইবাদতে রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চরিত্রকে অনুসরণ করতে চান, তাদের জন্য নামাযের তাকবীরে তাহরীমা থেকে তাসলীম, অর্থাৎ সালাম ফিরানাে পর্যন্ত যথাসম্ভব রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নামাযের ব্যাপকভিত্তিক বর্ণনা সম্বলিত একখানা বই লেখার কর্তব্য অনুভব করি। আমি এ বইটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছি। উপর ও নীচ। উপরের ভাগে হাদীসের মতন’ সহ মূল বক্তব্য পেশ করেছি। বিভিন্ন হাদীসের পৃথক পৃথক শব্দগুলােও ফায়দার জন্য উল্লেখ করেছি। আমি সনদে বর্ণনাকারী সাহাবীদের নাম খুব কমই উল্লেখ করেছি। উদ্দেশ্য হল, তা যেন সহজ-পাঠ্য হয়। নীচের অংশে উপরের অংশের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছি এবং হাদীসের সনদসহ বিভিন্ন সমালােচনা ও পর্যালােচনা করেছি। তাতে দুর্বল ও সহীহ হাদীস সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছি। এরপর আমি উদ্ধত হাদীস সম্পর্কে ওলামা ও মােহাদ্দেসীনে কেরামের মতামত উল্লেখ করেছি এবং তাদের দলীল-প্রমাণ বিস্তারিত আলােচনা করেছি।
আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) আধুনিক যুগের একজন স্বনামধন্য আলেম। তাঁর জন্ম ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায়। ১৯১৪ সালে আলবেনিয়ার রাজধানী স্কোডারে (বর্তমান নাম তিরানা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও দ্বীনদারী ও জ্ঞানার্জনে তাঁরা ছিলেন সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সমৃদ্ধ। আলবেনিয়ায় নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করার পর নাসিরুদ্দীন আলবানীর পরিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে চলে আসেন। দামেস্কে ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ হয়। এরপর প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে তাঁর পিতা তাকে স্বতন্ত্র পাঠ্যসূচী তৈরি করে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই তিনি আল-কুরানুল কারীম, নাহূ, সরফ, তাজবীদ এবং হানাফী ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে থাকেন ও একইসাথে কোরআনের হিফযও সমাপ্ত করেন। ইসলামী শাস্ত্রে সুপন্ডিত এই আলেম ঘড়ি মেরামতের কাজকে পেশা হিসেবে নেন। এর অন্যতম কারণ ছিল জ্ঞানার্জন ও গবেষণার জন্য কিছু সময় বের করে নেওয়া। নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াত এবং এর পরবর্তী ঘটনাদি। এই কারণে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তাঁর এই মতবাদের সাথে দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করায় তিনি এগিয়ে যেতে উৎসাহ পান। শাইখ আলবানী দামেস্ক, মিশর ও সিরিয়ার বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রস্তাব পান। তবে গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যোগ দেননি। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমগ্র, গবেষণাপত্র ও বক্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের কাছে সমাদর লাভ করেছে। তিনি কুয়েত, আরব আমিরাত ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে বক্তা হিসেবে ভ্রমণ করেছেন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমূহ হলো ‘আত-তারঘিব ওয়া আত-তারহিব (চার খণ্ড)’, ‘আত-তাসফিয়াহ ওয়া আত-তারবিয়াহ’,’সহীহ ওয়া যাই’ফ সুনান আত-তিরমিযী (চার খণ্ড)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা এক শতাধিক। হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে পারদর্শী এই আলেম ১৯৯৯ সালে বাদশাহ ফয়সাল পুরষ্কারে ভূষিত হন। একই বছর জর্ডানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।