"আর রাহীকুল মাখতুম" বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘আর-রাহীকুল মাখতুম’ গ্রন্থটি বিশ্বব্যাপী আবেদন ও অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যুগের সেরা সীরাত গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। গ্রন্থটি বর্তমান বিশ্বে বেশ আলােচিত, প্রশংসনীয়। নবী প্রেমিকরা মনে হয় এমন একটি সীরাত গ্রন্থের জন্যে বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাে! গ্রন্থটি শাইখ আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী কর্তৃক রচিত। সৌদি আরবের সরকারি উদ্যোগে রাবেতা আলমে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১৩৯৬ হিজরীতে নবীজীর জীবন-চরিত বিষয়ক গ্রন্থ রচনা প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযােগিতা আয়ােজনের উদ্দেশ্য ছিল উপযুক্ত গ্রন্থাকারদের মধ্যে সুগভীর মনীষা ও গবেষণাজনিত যৌক্তিক রচনা ও অনুসন্ধানী স্পৃহা সৃষ্টির মাধ্যমে নবী চরিত বিষয়ে উৎকৃষ্ট মানের গ্রন্থ রচনা। এটি ছিল কল্যাণবহ উদ্যোগ। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিযােগিতায় অংশ গ্রহণকারী সব ক’টি গ্রন্থের মধ্যে প্রথম পুরস্কার লাভের এক দুর্লভ গৌরব অর্জন করে এই গ্রন্থটি। সকলেই অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন গ্রন্থটির। পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে গ্রন্থটি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত পর্যালােচনায়, সীরাতের ঘটনামালার সুসংহত ও মনােজ্ঞ উপস্থাপনায় বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি সত্যিই এক নজিরবিহীন রচনা। আল কুরআনুল কারীম, হাদীসে নববী ও বিশুদ্ধ আছার এবং ঐতিহাসিক বর্ণনার নির্যাস বের করে প্রাজ্ঞ লেখক তাঁর এ বইটি সুবিন্যস্ত করেছেন। সীরাত বিষয়ে লিখিত প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকেও তিনি বহু মণিমাণিক্য উপস্থাপন সংক্ষিপ্ততায়, সুখপাঠ্য দীর্ঘ আলােচনার মাধ্যমে বিশ্ব নবীর জীবনকে নির্ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বনবীকে নিয়ে আজ অবধি হাজার হাজার গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়েছে। আরাে হবে। সন্দেহ নেই তাতে। এর মধ্যে কয়টি গ্রন্থই বা যুক্তির বিচারে আর কষ্টিপাথরে যাচাই করলে গ্রহণযােগ্যতা পাবে? সে হিসেবে, বইটি বন্ধ্যাত্বের এই আধুনিক যুগে পূর্ণাঙ্গ ও পর্যাপ্ত তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়েছে। লেখক প্রথমে গ্রন্থটি আরবী ভাষায় লেখেন। পরে উর্দু ভাষায়ও প্রকাশ করা হয়। আরবী, উর্দু, ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থটি অল্পদিনে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বাংলা ভাষায়ও এর কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ বের হয়। আমাদের অনুবাদটি সহজসাবলীল। আলােচনার প্রাসঙ্গিক স্থানে প্রচুর ঐতিহাসিক চিত্র-মানচিত্রও সন্নিবেশ করা হয়েছে। মূলকথা আমাদের এই অনুবাদটি হৃদয়ের আবেগে নতুন শিরােনামে, যা আপনার চিত্তকে নিয়ে যাবে আলােক-মায়ার গভীরে। নবীজীকে অনুসরণ করা, তাঁর জীবন। সম্পর্কে জানা, প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। এই বইটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন কাহিনী বিস্তারিতভাবে আলােচিত হয়েছে। আসুন, আমরা নবীজীর জীবনকে জেনে সে অনুসারে নিজেদের গড়ে তুলি—‘অমর জীবন’ পড়ি! সােনালি জীবন গড়ি!!
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।