"জীবন থেকে পাঠ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আমরা এক চরম অবক্ষয়ের কাল অতিক্রম করছি। সমাজ জীবন বা জাতীয় জীবনে সর্বত্র নীতিহীন, আদর্শহীন বিবেকহীন মানবতাবোধের অতীব অভাব লক্ষ্য করছি। সর্বত্র চলছে নষ্ট দুষিতদের রাজত্ব। কাজেই সমাজজীবন বা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে চলছে নীতিহীন, আদর্শহীন চরিত্রহীনদের দৌরাত্ম। রাজনীতি অঙ্গনেও আজকে নীতিবান, আদর্শবান, চরিত্রবানদের বড়ই আকাল। দেশে মানবপ্রেমিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ অবস্থার মাঝেও হাতে গোনা দু'চারজন ত্যাগী, একনিষ্ঠ, আদর্শবাদী রাজনীতিবিদ পাওয়া যায়— তাদেরই অন্যতম সংগ্রামী জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। যিনি প্রায় ছয় দশকের অধিক কাল এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ গণমানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেকের জীবনকর্ম থেকে, অনেক খ্যাতিমান রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন – কারাগারে থেকেছেন। এসব নেতাদের ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। এসব দেখার কিছু স্মৃতি নিয়েই 'জীবন থেকে পাঠ' নামক গ্রন্থটি রচনা করেছেন। যার মধ্যে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কমরেড মণি সিংহ, তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ আলতাফ হোসেনসহ চৌষট্টিজন মহান ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত জীবনী। যা পাঠ করে পাঠক সমাজ এইসব মহান ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট। দুই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জন্মও এই গ্রামে অগ্নিযুগের বিপ্লবী সূর্য সেন ও মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন। পিতামহ রমেশ ভট্টাচার্য ছিলেন ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজসংস্কারক। পিতা প্রফলুকুমার ভট্টাচার্য একজন আত্মনিবেদিত শিক্ষাব্রতী, আর জননী মনিকুন্তলা দেবী স্বদেশী ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মাতৃসমা ও তাঁদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। '৫৭তে ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্তির কারণে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। সেখান থেকে রাজনীতি তাঁর পিছু ছাড়েনি। '৬২তে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। '৬৬-র ৬ দফা ও '৬৯-এর ১১ দফা দাবীতে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। '৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন ও '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আগরতলার ২ নম্বর সেক্টরে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। '৭২-এ বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে দুই যুগ ধরে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। '৯৩-তে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ২০১২ সালে ‘গণঐক্য কমিটি’ নামে দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মানুষদের পৃথক প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারাবরণের ইতিহাস ছাত্রজীবন থেকে। সাহিত্যে আসক্তি বাল্যকাল থেকে। স্কুলের ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখি শুরু ও পত্রিকাদিতে প্রকাশ, যা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত চলেছে। পরবর্তীতে রাজনীতকেই জীবনের চূড়ান্ত প্রাধান্য দেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রতিক রাজনীতি বিষয়ে কলাম লিখছেন। তাঁর ‘দুর্মুখের জার্নাল’ ও ‘দুর্মুখ দরবার’ শীর্ষক পৃথক দুটি কলাম রাজনৈতিক মহলে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়।